এইচএসসির তারিখ জানা যাবে আগামী সপ্তাহে

স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কবে থেকে নেওয়া হবে, আগামী ‘সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে’ সেই তারিখ ঘোষণা করা হবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2020, 09:38 AM
Updated : 30 Sept 2020, 06:29 PM

শিক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদকদের সঙ্গে বুধবার এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “আমি আশা করছি আগামী সোম-মঙ্গলবারে মধ্যে এ বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের পরিপূর্ণ পরিকল্পনা একেবারে তারিখসহ আপনাদের সামনে ঘোষণা করতে পারব।”

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করার আগে শিক্ষার্থীদের চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা আছে।

সেই ছুটি আরও এক দফা বাড়ানো হচ্ছে বলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেই সিদ্ধান্ত জানাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তা স্থগিত রয়েছে। বছর প্রায় শেষ হয়ে আসায় এ পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

সাড়ে তিন ঘণ্টার মত বিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “দ্রুততম সময়ের মধ্যে মিনিমাম কতগুলো সাবজেক্ট নিয়ে এবং মিনিমাম কত নম্বরের পরীক্ষা নিয়ে এই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারি... সেক্ষেত্রে আমাদের হয়ত কিছু কিছু বিষয়ের বেলায় জেএসসি, এসএসসির নম্বরকেও মূল্যায়নের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি। কাজেই অনেকগুলো অপশন আমরা ঠিক করেছি।”

মহামারীর মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কতগুলো বিষয়ে নজর দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “যার বাড়িতে কেউ করোনায় আক্রান্ত আছে, তার কী হবে? নিশ্চয়ই তাকে আমরা চাই না সে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসুক। তার জন্য তো একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। এই সমস্ত প্রস্তাব নিয়ে, সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে আপনাদের সামনে আসব।”

মহামারীর মধ্যে কেনো কারণে কেউ পরীক্ষায় বসতে না পারলে তার মূল্যায়ন কীভাবে করা হবে, সেই সিদ্ধান্তও সরকার নিয়ে রাখছে বলে জানান দীপু মনি।

তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন পড়ার সঙ্গে (নেই), একেবারে পরীক্ষা নেওয়ার ষোলোআনা প্রস্তুতি নেওয়ার অবস্থায় শিক্ষার্থীরা নেই। সেজন্য তাদের অন্তত চার সপ্তাহ সুযোগ দেওয়া।

“যেন তারা সুবিধাজনক উপায়ে দুশ্চিন্তা ছাড়া সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিতে পারে, সেটার জন্য আমরা ব্যবস্থা করব। অপশন রাখব, যারা কোনো কারণে পরীক্ষাটা দিতে পারবেন না, তাদের মূল্যায়নটা কীভাবে হবে।”

এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সকল প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পরীক্ষার ঠিক আগে আমরা তা স্থগিত করি। বিরাট সংখ্যক পরীক্ষার্থী, তাদের সঙ্গে তাদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনরা কেন্দ্রে যান।

“১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে দুই-একজন অভিভাবক যান। লক্ষাধিক পর্যবেক্ষক-শিক্ষকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন। সব মিলিয়ে ২৫-৩০ লাখ লোকের সম্পৃক্ততা এবং যাদের অধিকাংশই হয়ত গণপরিবহন ব্যবহার করবেন। স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে, সেজন্য এখনও পরীক্ষাটা নিতে পারিনি।”

শীতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার শঙ্কার বিষয়টি তুলে ধরে দীপু মনি বলেন, “এর মধ্যে আমরা কী করব? অনেকে আমাদের মেইল করে জানিয়েছেন, পরীক্ষা দিতে চায় না, আগের রেজাল্ট দিয়ে মূল্যায়ন করা হোক, এটা একটা অপশন।

“সব প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষা নেওয়া গেল না, তাহলে কী হবে? এই শিক্ষার্থীরা কি আর পরবর্তী পর্যায়ে যাবে না? নিশ্চয় পরবর্তী পর্যায়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তাদের আরেকবার পরীক্ষার সম্মুখীন হতেই হচ্ছে। তাহলে পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন করার একটা সম্ভবনা তো থেকেই যাচ্ছে, আমরা সেটিকে নাকচ করে দিচ্ছি না।

“কিন্তু আমি পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের এটাও ভাবতে বলব- আমাদের অন্য অপশনও কিন্তু ভাবতে হবে। দুই-তিন বছর পরে গিয়ে চাকরির ক্ষেত্রে কেউ যাতে না বলে তুমি ২০২০ সালের ব্যাচ, তুমি তো পরীক্ষা দিয়ে পাস করনি, তাই তোমার এইচএসসির রেজাল্টকে গুরুত্ব দিলাম না। এমন যেন না হয়।”

পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলে ‘কী কী, কতটুকু সম্ভব হতে পারে’ সেসব বিষয় ঠিক করা হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, এইচএসসির সিলেবাস কমানোর কোনো বিষয় এখানে নেই, কারণ তাদের সিলেবাস শেষ হয়েছিল। পরীক্ষা নেওয়া হলে কী পদ্ধতিতে নেওয়া হবে সেটিই এখন সিদ্ধান্তের বিষয়।

অন্য ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষা, আগামী বছরের এসএসসিসহ অন্যন্যা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এই মুহূর্তে কিছু বলছি না। খুব শিগগিরই আরেকটা সভা আছে, তার পরে স্পষ্টভাবে সবকিছু জানিয়ে দেব। আমরা নানান রকম অপশন নিয়ে ভাবছি। যেহেতু নিশ্চিত না, অনেক কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে।

“একদিকে রয়েছে যে কোনো পরীক্ষা না নিয়ে একেবারে অটো প্রমোশন হয়ে যাওয়া। আরেকপ্রান্তে রয়েছে একদম পরীক্ষা নেওয়া। পরীক্ষা নিতে হলে যা পড়ানো হয়নি, ন্যূনতম যতটুকু পড়িয়ে নিতে হবে, আগামী ক্লাসে তাকে যাওয়ার জন্য তৈরি করতে... এজন্য কারিকুলাম ছোট করা থেকে সব কাজ করেছি। সহসাই এ বিষয়ে জানাতে পারব।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরে কীভাবে কি করা হবে সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন প্রণয়নের কাজ চলছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, সব ঠিক করাই আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে কী কী করতে হবে।

কবে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায় সে বিষয়ে কোভিড-১৯ জাতীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠক করার কথা জানানো হলেও সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মন্ত্রী।

“শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর বাইরে থেকে আক্রান্ত হলেও বলা হবে… আমরা সে ব্যাপারে সচেতন। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রেখে তাদের শিক্ষা জীবন সামনের দিকে নিয়ে যেতে আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, “বিশ্বে কোথায় কী ঘটছে আমরা তা নজর রাখছি। আমাদের এখানে কী ঘটছে তাতে নজর রাখছি। সকলের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টিকেই আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি।”

দ্রুততার সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাসের মধ্যে উপাচার্যর পদ ফাঁকা আছে সেই তালিকা করা হচ্ছে।

সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে নববধূকে ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি যেন আর না হয় সেজন্যও সরকার কাজ করছে।

ইংরেজি মাধ্যম এবং কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলে মোট ছয় হাজার পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রতিদিন ৩৫টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ১৮০০ জনের পরীক্ষা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া তাদের জন্য ‘অনেক সহজ’।

“কওমির অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মাদ্রাসায় অবস্থান করে। আমাদের শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে তারা অনুমতি পেয়েছে। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই তাদের পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছি।”

সম্প্রতি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যর রুটিন দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এ নিয়ে এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগেও রেজিস্ট্রারদের এই রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে কোনো অভিযোগ যায়নি।

করোনাভাইরাস মহামারীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি নিয়ে এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সবাই এক ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। সকলের জন্য এক ধরনের ছাড় দেওয়া হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চলা সহজ হবে না। কারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে হয়। উভয় পক্ষকে কিছু ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।”

কারো কারো ক্ষেত্রে কিস্তিতে টিউশন ফি পরিশোধের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে মত দিয়ে দীপু মনি বলেন, টিউশন ফি’র কারণে কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়ে যায় সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। কোথাও কোনো ব্যত্যয় থাকলে সেটা জানানো হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

আরেক প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, এমপিও নীতিমালাকে আরও হালনাগাদ করা হবে। যাতে পিছিয়ে পড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুবিধা হয়। বিভিন্ন শ্রেণিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাগ করা হচ্ছে।

“অক্টোবরে নতুন এমপিও নীতিমালা প্রকাশের পর নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন চাইব। তবে করোনার কারণে এই অর্থ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যতটা দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব চেষ্টাটা চালিয়ে যাব।”

মন্ত্রী বলেন, “পরিচালনা পর্যদ নিয়ে অনেক ধরনের সমস্যা হয় এটি সত্য। নীতিমালায় পরিবর্তন করা হচ্ছে, এটা এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিশেষ উপ-কমিটিতে আছে। তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মতামত দেবেন। এরপর আমরা নীতিমালাটি চূড়ান্ত করব।”

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক এই মতবিনিময় সভায় যুক্ত ছিলেন।

পুরনো খবর