ঢাবি ছাত্রীর ধর্ষকদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি শিক্ষক সমিতির

দেশে ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে সব অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2020, 06:13 PM
Updated : 29 Sept 2020, 06:13 PM

মঙ্গলবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নববধূ, সাভারে ও চট্টগ্রামে দুই তরুণী ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ‘ধর্ষকদেরও’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্র সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই নেতা হাসান আল মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় মামুন ও সোহাগের সঙ্গে তাদের সহকর্মী ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকেও আসামি করা হয়েছে। তবে নুর-রাশেদদের নেতৃত্বাধীন ছাত্র অধিকার পরিষদ এই মামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে বিক্ষোভ করেছে, যদিও এই মামলা হওয়ার পর পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে হাসান আল মামুনকে সরিয়ে দিয়েছে তারা।

ওই ছাত্রীর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের ছাত্র (সিনিয়র) হাসান আল মামুন ‘প্রেমের সম্পর্ক’ থেকে গত ৩ জানুয়ারি তাকে তার লালবাগের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে ছাত্র অধিকার পরিষদের সোহাগ তাকে সাহায্য করেন। পরে মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে পেছাতে থাকে এবং সহায়তার নাম করে সোহাগ তাকে চাঁদপুরে নিয়ে ঢাকা ফেরার পথে লঞ্চে ধর্ষণ করেন।

এই ঘটনায় নুরসহ তাদের সংগঠনের বেশ কয়েকজনের কাছে প্রতিকার চেয়ে হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে তাকে অনলাইনে অপপ্রচারের মাধ্যমে তার চরিত্রহননের চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ তুলে নুর ও তার সহযোগীদের দুটি মামলা করেছেন ওই ছাত্রী।

এই ঘটনার বিচারের দাবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্রী একই বিভাগের ছাত্র বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ কর্তৃক দুইবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

“নির্যাতিত ছাত্রী ইতোমধ্যেই লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় এই ঘটনায় অভিযুক্ত মূল আসামিসহ সহযোগিতা করার অপরাধে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের এ সকল ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে দল-মত নির্বিশেষে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন মুক্ত বাংলাদেশ গঠনের।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলেছে, “নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা সমাজে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের গণধর্ষণের ঘটনা যেখানে আসামি হিসেবে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রণি, রবিউল ইসলাম, তারেক আহমদ, মাহফুজুর রহমান, অর্জুন লস্কর এবং তাদের তিনজন সহযোগী, যাদের সকলের বিরুদ্ধে সরকারি ছাত্র সংগঠন করার অভিযোগ আসছে। তবে এই ঘটনার মূল আসামি সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“চট্টগ্রামে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক তরুণী। এই ঘটনায় সহযোগিতার করার অভিযোগে এক দম্পতিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাভারে প্রেমের নামে প্রতারণা করে বিয়ে করার কথা বলে তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং সেই অভিযোগে মূল আসামি প্রেমিক শাকিব রহমান ও তার সহযোগীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”