ফোন রেকর্ড প্রকাশ বন্ধ করতে হবে: হাই কোর্ট

আনুষ্ঠানিক প্রয়োজন ছাড়া এবং গ্রাহকের অজান্তে তার ফোনের কল রেকর্ড সংগ্রহ ও কথোপকথন প্রকাশ বন্ধ করার উপর জোর দিয়েছে উচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2020, 04:55 PM
Updated : 29 Sept 2020, 04:57 PM

একটি মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ থেকে এই অভিমত আসে।

আদালত বলেছে, “হরহামেশাই আমরা দেখতে পাচ্ছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিও, ভিডিওসহ নাগরিকের ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছড়িয়ে পড়ছে বা প্রকাশ করা হচ্ছে।

“আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্রসহ নাগরিকের অন্যান্য যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। আগ্রহী কেউ বা কোনো অংশ চাইলেই তা সহজেই লঙ্ঘন করতে করতে পারে না।”

দশ বছর আগে নেত্রকোনায় শিশু সৈকত অপহরণ ও হত্যা মামলায় গত বছর ২৮ আগস্ট সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিল হাই কোর্টের এই বৃহত্তর বেঞ্চ।

রায়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি অলিকে খালাস দিয়েছিল উচ্চ আদালত।

গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পর্যবেক্ষণসহ পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়।

রায়ে বিটিআরসি ও দেশের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়ে আদালত বলেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এবং ফোন কোম্পানিগুলোর বৃহত্তর দায়িত্ব হল যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষা করে সাংবিধানে সুরক্ষা দেওয়া।

“তারা তাদের কোনো গ্রাহক বা নাগরিকের যোগাযোগ সম্পর্কিত কোনো তথ্যই সরবরাহ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আইন সেটিকে অনুমোদন দেয়।”

কখনও কখনও মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ কারও কল রেকর্ড সংগ্রহ করতে পারলেও সেক্ষেত্রেও নিয়মের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে আদালত।

রায়ে বলা হয়েছে, “হানা দিয়ে বা শিকার করে করে নয়, কারও যোগাযোগ সম্পর্কিত তথ্য বা কললিস্টের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অবশ্যই কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতে হবে।

“নইলে সরবরাহ করা তথ্য বা নথি প্রমাণের গুরুত্ব হারাবে এবং সরবরাহকারী ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষ ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দায়ী হবেন।”

সৈকত হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত আসামি অলির মোবাইল কললিস্ট তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ এই কললিস্টে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ছিল না।

বিদ্যমান সাক্ষ্য আইন সংশোধনের গুরুত্ব তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, সাক্ষ্য আইন সংশোধন না করে ডিজিটাল ডকুমেন্টকে সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে কোনো ব্যক্তির কল লিস্ট বা কথোপকথনের কোনো মূল্য থাকে না।

রায়ে প্রত্যাশা করা হয়েছে, সরকার সাক্ষ্য আইন সংশোধন করতে বা এ সংক্রান্ত একটি নতুন আইন প্রণয়নে উদ্যেগী হবে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদারহণ টেনে রায়ে বলা হয়েছে, সাক্ষ্য হিসেবে ‘ইলেকট্রনিক রেকর্ড’ বিবেচনায় নিয়ে ভারত তাদের সাক্ষ্য আইনে কিছু বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি সাক্ষ্য আইনের সংজ্ঞাও সংশোধন করেছে।

আদালত বলেছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ও বিকাশ এবং বিভিন্ন অপরাধে এর ব্যবহারের পরও বাংলাদেশের সাক্ষ্য আইনটি এখনও সংশোধন বা যুগোপযোগী করা হয়নি। সাক্ষ্য আইনের সংশোধন বা যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি। সাক্ষ্য আইন সংশোধন বা যুগোপযোগী হওয়া উচিত। 

সৈকত হত্যা মামলায় ভিডিও বা স্থিরচিত্র, ধারণ করা রেকর্ড এবং ডিস্ককে সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো যথাযথ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় হাই কোর্ট সাক্ষ্য আইন অনুসারে তা গ্রহণ করতে পারেনি।

এক্ষেত্রে ২০০৯ সালে প্রণীত সন্ত্রাসবিরোধী আইনটিকেই ব্যতিক্রম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে।

বলা হয়েছে, এ আইনের ব্যতিক্রম হল, ফেইসবুক, স্কাইপ, টুইটারসহ কোনো ইন্টারনেট সাইটে কোনো সন্ত্রাসী বা ব্যক্তি যদি অপরাধমূলক আলোচনা, কথোপকথন করে থাকে বা অপরাধ সংগঠনে কোনো ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে, তাহলে তা পুলিশ অথবা আইন প্রয়োগকারী তদন্তের জন্য আদালতে উপস্থাপন করলে তা প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়।