জেসিসি বৈঠক: তিস্তার সুরাহা চায় ঢাকা

দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টির সমাধান করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2020, 04:39 PM
Updated : 29 Sept 2020, 04:39 PM

মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “তিস্তা ইস্যুতে দুপক্ষের মন্ত্রী পর্যায়ে ঐকমত্য হয়েছে। ইনিশিয়ালও হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমরা বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়েছি।”

বিকালে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এক ঘণ্টাব্যাপী জেসিসির ষষ্ঠ ওই বৈঠকে ভারতের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

বৈঠকে তিস্তার পাশাপাশি বাকি ছয়টি যৌথ নদীর পানির হিস্যার বিষয় মীমাংসার ক্ষেত্রে ভারত ‘যথেষ্ট আগ্রহ’ দেখিয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যৌথ ঘোষণায় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছিল।

মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।

নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি।

তিস্তা চুক্তি না হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “বাস্তবায়নটা শুরু হয় নাই। আপনারা জানেন কী কারণে, আমরা আশা করি তারা (ভারত) বুঝবে, এটা বাস্তবায়ন করবে।”

এর মধ্যে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকও আটকে আছে প্রায় ১০ বছর ধরে; জেসিসির মিটিংয়ে সেই বৈঠক ‘শিগগির’ করার বিষয়ে আলোচনা হলেও দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “জেআরসি মিটিং একটা হবে। ২০১০ সালে সর্বশেষ জেআরসি মিটিং হয়েছিল। এখন আমরা আশা করছি আরেকটি হবে। সেটা শিগগির হবে।”

এতদিন বৈঠক না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “মিটিং হয়নি, অনেক সময় আমাদের পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ছিল না। সে ধরনের বাধা থাকায় তখন হয়নি। এখন ইন-প্রিন্সিপল এগ্রিড, এটা হবে। আমি টাইম ফ্রেম জানি না। কিন্তু এটা হবে।”

জেসিসি বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতেও তিস্তার পাশাপাশি অন্য ছয় নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে জোর দেওয়র কথা উল্লেখ করা হয়।

সেখানে বলা হয়, “তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে দুই মন্ত্রী তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

“একইসঙ্গে অন্য ছয়টি যৌথ নদীর- মানু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার- পানি বণ্টনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী চুক্তির বিষয়ে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির উপর গুরুত্ব দেন তারা।”

যৌথ ঘোষণায় আরও বলা হয়, দ্রুত সময়ে যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক যেন হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কয়েক দশক ধরে তিস্তার পানির বণ্টনের বিষয়টি ঝুলে থাকার মধ্যে এই নদীর তীর ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং শুকনো মৌসুমে পানি সঙ্কট দূর করতে ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যন্ড রেস্টোরেশন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যেখানে ব্যয় হতে পারে আট হাজার কোটি টাকার মতো।

এই প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়েই ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন আগ্রহী বলে খবর এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে; এক্ষেত্রে চীনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

তবে গণমাধ্যমে খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে এদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “গণমাধ্যমে খবর হয়েছে, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।”

আলোচনায় আরও যেসব বিষয়

তিস্তা ইস্যু ও সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য, ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের ধীরগতি প্রভৃতি বিষয়ে জেসিসির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বিশেষ বিমান যোগাযোগ চালুর বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এয়ার বাবল নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। কোন কোন রুটে এবং কোন কোন সময়ে বিমান চলবে পরবর্তীতে সেটা নির্ধারিত হবে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন সময়মতো বাস্তবায়ন হয় সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি তদারকি করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে।

কমিটিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব এবং ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানান মন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে নেপাল এবং ভুটানের ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।