সীমান্তে হত্যা ভারতের জন্যও লজ্জার: মোমেন

সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার মতো বিষয় দুই দেশের সম্পর্কে বড় ধরনের ‘আঘাত’ নিয়ে আসে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2020, 03:54 PM
Updated : 29 Sept 2020, 03:54 PM

মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মোমেন বলেন, “এটা আমাদের জন্য লজ্জার, ভারতের জন্যও লজ্জার।

”কেউ যখন মারা যায়, এটা আমাদের যে সলিড রিলেশনশিপ, আমাদের যে সোনালী অধ্যায়, একজন মারা গেলে এটা একদম ধপাস করে পড়ে যায়। আমরা এগুলো তুলে ধরেছি।”

একইসঙ্গে হুট করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাও তুলে ধরেন তিনি।

“অনিয়ন ক্রাইসিস ছোট্ট জিনিস, এই দুর্ঘটনা হয়, আমাদের মধ্যে যে সম্পর্কের বলিষ্ঠতা সেখানে আঘাতপায়। এগুলো যাতে কখনো না হয় আমরা সেটা নিয়ে আলাপ করেছি।”

ভারতের সঙ্গে আলোচনায় সবসময় বাংলাদেশের বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে থাকে সীমান্ত হত্যা। মঙ্গলবার বিকালে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি উঠে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সাড়ে আট মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৯ বাংলাদেশির। এর মধ্যে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে। পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের শারীরিক নির্যাতনের পর।

গত বছর এই সময় (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সীমান্তে বিএসএফের গুলি বা নির্যাতনে মারা গিয়েছিলেন ২৮ জন বাংলাদেশি। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে সীমান্ত হত্যা কিছুটা কমলেও সেটি তিন গুণ বাড়ে ২০১৯ সালে।

সংস্থাটির আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সীমান্তে ১৫৮ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।

সম্প্রতি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার বিষয় মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

তিনি বলেন, “আপনারা জানেন কিছুদিন আগে আমাদের ডিজি লেভেলে বিজিবি এবংবিএসএফের মধ্যে আলাপ হয়েছিল। এটা গুড নিউজ। ওরা খুব ভালো আলাপ করেছে।

”দুই পক্ষই একমত হয়েছেন কেউ যাতে মারা না যায়। এবং যেসব এলাকায় মারা যায় সেখানে আমরা জয়েন্ট মনিটরিং করব। সেসব এলাকায় আমরা স্পেশাল অ্যাফর্ডস নেব যাতে কেউ মারা না যায়।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা আজকেও (সীমান্ত হত্যার বিষয়টি) রেইজ করেছি। কারণ এটা খুবই দুঃখজনক যে, বন্ধু দেশের মধ্যে লোক মারা যায়, এটা আমরা পছন্দ করি না, কেউ পছন্দ করে না।”

সীমান্ত হত্যা নিয়ে জেসিসি বৈঠকের যৌথ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ”দুইপক্ষই একমত হয়েছে সীমান্তে বেসামরিক লোকের মৃত্যুর বিষয়টি উদ্বেগের এবং এটাকে শূন্যতে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সীমান্তের পবিত্রতা নিয়ে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের জ্ঞাত করার উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

”সীমান্ত এলাকার ১৫০ গজের মধ্যে এক সারির বেড়া দেওয়ার অনুমোদনের দ্রুততার সঙ্গে দেওয়ার অনুরোধ করে ভারত, যাতে এর মাধ্যমে সীমান্ত অপরাধ কমিয়ে আনা যায়।”