কোনো উন্নত দেশের সড়কে বেওয়ারিশ কুকুর থাকে না: তাপস

উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের উপযুক্ত রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া শেখ ফজলে নূর তাপস কুকুর স্থানান্তরের উদ্যোগের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2020, 01:36 PM
Updated : 29 Sept 2020, 06:53 PM

ঢাকা থেকে কুকুর সরানোর বিরোধিতাকারী কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধি ও ব্যক্তির সঙ্গে মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, কোনো উন্নত দেশের সড়কে বেওয়ারিশ কুকুর থাকে না। তাই বেওয়ারিশ কুকুরের পরিচর্যার দায়িত্ব যদি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পুরোপুরিভাবে নেন তাহলে কুকুর অপসারণের প্রয়োজন হবে না।

লকডাউনে খাদ্য সঙ্কটে পড়া রাজধানীর অফিসপাড়ার কুকুরগুলোকে নিজ উদ্যাগে খাবার দিচ্ছিলেন কেউ কেউ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজধানী থেকে ৩০ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণের সিদ্ধান্ত জানালে তার বিরোধিতা শুরু করে বিভিন্ন প্রাণী অধিকার সংস্থা এবং পশুপ্রেমীরা। কুকুর অপসারণ না করার দাবিতে চিত্রাঙ্কন, মানববন্ধনসহ বেশ কিছু কর্মসূচিও পালিত হয়।

এই প্রেক্ষাপটে অভয়ারণ্যসহ কয়েকটি প্রাণি অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত সংগঠনের প্রতিনিধি ও পশুপ্রেমিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময়ে বসেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তাপস।

রাজধানীতে এখন বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা দেড় লাখ বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভাষ্য।

ব্রিটেন থেকে পড়ে আসা ব্যারিস্টার তাপস বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হল, ঢাকাকে একটি উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তোলা। পৃথিবীর উন্নত কোনো দেশের উন্মুক্ত সড়কে, পার্কে, খেলার মাঠে বেওয়ারিশ কুকুর পাওয়া যায় না। আমরা ঢাকাকেও সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, একটি উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আসুন, আমরা সবাই মিলে সেই লক্ষ্যে কাজ করি।”

বেওয়ারিশ কুকুরের ‘পরিপূর্ণ দায়িত্ব’ নিলে স্থানান্তর করা হবে না জানিয়ে উপস্থিতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের বরাতে যে বিষয়টি উঠে এসেছে সেটি হল- অনেকগুলো বেওয়ারিশ কুকুরকে কেউ না কেউ পুষছে বা খাবার দিচ্ছে বা তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে এগুলোর দেখভাল করছে। সেসব বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে যদি আপনারা চিহ্নিত করেন তাহলে আমরা সেগুলো স্থানান্তর করব না।”

ঢাকা শহর থেকে ৩০ হাজার কুকুর বাইরে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, যার প্রতিবাদে ধানমণ্ডি ১০ এ সড়কের পাশে দেয়ালে রঙ-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মানুষ ও কুকুরের সহাবস্থানের চিত্র। পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুক্র ও শনিবার চলে এই চিত্রাঙ্কন।

মেয়র তাপস বলেন, “আপনারা মানুষের মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন, যেন কেউ একটু বিস্কুট বা একটু খাবার দিয়ে বেওয়ারিশ কুকুরের প্রতি ভালোবাসার দায়সারা বহিঃপ্রকাশ না করে সেসব বেওয়ারিশ কুকুরের পরিপূর্ণ দায়িত্ব নেন। বেওয়ারিশ কুকুরপ্রেমী মানুষজন যেন এসব পশুকে পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন এবং পোষ্য প্রাণির পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত থেকে আটটি স্থানে প্রতিদিন কুকুরদের খাবার দেন ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয় ও তার বন্ধুরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

“এসব বেওয়ারিশ কুকুরকে পোষ্য কুকুর হিসেবে গ্রহণ করে পূর্ণ দায়িত্বে যেন নিজ ঘরে নিয়ে যান এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিপূর্ণ পরিচর্যার ব্যবস্থা নেন। খাবার-দাবারের পাশাপাশি যেন পরিপূর্ণ ভরণ পোষণ করেন, সঠিকভাবে পরিচর্যা করেন। এতে করে নগরবাসীও শান্তি পাবে, সকলেই স্বস্তিতে থাকবে, বেওয়ারিশ কুকুরগুলোও নিরাপদ থাকবে।”
রাজধানীর বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর ব্যবস্থাপনায় বৈঠকে উপস্থিত পশুপ্রেমীদের কাছে লিখিত প্রস্তাব চেয়ে ফজলে নূর তাপস বলেন, “আমাদের কর্মপরিকল্পনার সাথে আপনাদের সুপারিশ, পরামর্শগুলো সমন্বয়ের প্রয়াস থাকবে। তবে আমাদের সমন্বিত সেই প্রয়াসে আমরা সবাই মিলে একটি যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চাই, যাতে করে যত্রতত্র বেওয়ারিশ কুকুরগুলো উন্মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াতে না পারে, সেটাই আমাদের সর্বোচ্চ বিবেচ্য বিষয়।”

এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছাতে প্রয়োজনে আগামীতে আবারও বসার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।