৫ বছরেও শেষ হয়নি তাভেল্লা হত্যার বিচার

রাজধানীর গুলশানে ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যার বিচার শেষ হয়নি পাঁচ বছরেও।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাস আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2020, 12:54 PM
Updated : 28 Sept 2020, 12:54 PM

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪০ জনকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া মহামারীর কারণে আদালতে ছুটি থাকায় বিচার কার্যক্রম কিছুদিন বিলম্বিত হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, এ বছরই এ মামলা রায়ের পর্যায়ে যাবে।

মামলাটি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক জেহাদ হোসেন আংশিক সাক্ষ্য দেন। আগামী ১৪ অক্টোবর তার বাকি জবানবন্দি দেওয়ার তারিখ রয়েছে।

এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, “সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষের দিকে। অনেক আগেই বিচার কাজ শেষ হত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিলম্ব হয়েছে। মূল তদন্ত কর্মকর্তা ও বাদীর সাক্ষ্য শেষ হলেই সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায় শেষ হবে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন, সাফাই সাক্ষ্য এবং যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করতে পারেন আদালত। আশা করছি, এ বছরই তা হবে।”

এ মামলার আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুম, তার আব্দুল মতিন, তামজিদ আহম্মেদ রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাকতি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগ্নে রাসেল, সাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরীফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙ্গারি সোহেল।

তাদের মধ্যে কাইয়ুম ও সোহেলকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার কাজ চলছে। কাইয়ুমের ভাই মতিন জামিনে এবং বাকি চারজন কারাগারে আছেন।

ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা ছিলেন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সাহায্য সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। দেশে জঙ্গিবাদের নতুন উত্থানের মধ্যে ওই ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করে।

হত্যাকাণ্ডের পর আইসিসিওর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। প্রায় এক মাস পর ২৬ অক্টোবর মিনহাজুল আরেফিন রাসেল, রাসেল চৌধুরী, তামজিদ আহম্মেদ রুবেল এবং সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ, যারা সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের পর ইসলামিক স্টেট (আইএস) ‘দায় স্বীকার করেছে’ বলে খবর দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সে সময় ইংগিত দেন, এ হত্যাকাণ্ডে রাজনীতিকদের কেউ কেউ জড়িত।

ওই বছর ৪ নভেম্বর রাতে বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি নেতা কাইয়ুমের ভাই আব্দুল মতিনকে। পরের বছর ২৭ জুন কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ডিবি) গোলাম রাব্বানী হাকিম।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, “হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ পরিকল্পনা করা হয়।”

হত্যাকাণ্ডের বিবরণে অভিযোগপত্রে বলা হয়, “আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাভেল্লাকে হত্যা করে। মতিনের নির্দেশে শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। সেখানে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ ৫১ বছর বয়সী তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।”

২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। এরপর ওই বছরের ২৪ নভেম্বর শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।

মতিনের আইনজীবী শওকত হোসেন মিঞা বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে আব্দুল মতিনের সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার পর দীর্ঘদিন তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে থানায় একটি জিডিও করা হয়। অনেক দিন পর তাকে মামলাটিতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। কোনো সাক্ষী সেভাবে মতিনের নাম বলেননি। আমরা তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আইনিভাবে লড়ে যাচ্ছি।”

আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলও এ মামলার আসামিদের পক্ষে মামলা লড়ছেন। রাষ্ট্রপক্ষের ৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪০ জনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত।