সচিবালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঢিলেমি

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না কমলেও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনেকটা ঢিলেমি ভাব দেখা যাচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকশহীদুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2020, 04:12 AM
Updated : 27 Sept 2020, 05:13 AM

সচিবালয়ে ঢোকার সময় কারও শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনগুলোতে ঢোকার মুখেও হাত ধোয়া এবং শরীর জীবাণুমুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর গত এপ্রিল মাসে কোনো কোনো মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ে প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক টালেন বসালেও সেগুলোর বেশিরভাগই এখন আর কাজ করছে না।

গায়ে গা না লাগিয়ে লিফট ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে নোটিস টাঙানো থাকলেও সকালে অফিস শুরুর সময় সেই নির্দেশনা না মেনে গাদাগাদি করেই লিফটে উঠতে দেখা যায়।

বেশ কিছু কর্মকর্তা তাদের কক্ষে প্রবেশের সময় মাস্ক পরার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে দরজার নোটিস ঝুলিয়েছেন।

যেসব মন্ত্রণালয়ের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক টানেলগুলো সচল রয়েছে, বেশিরভাগ মানুষই সেসবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন না। মাস্ক ছাড়া সচিবালয়ের ভেতরে ঘোরাফেরাও চলছে অবাধে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকলে গত ২৬ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। টানা ৬৬ দিনের ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেওয়া হয়েছ, এখন পুরোদমে অফিস চলছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরপরই শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জীবাণুনাশক টানেল বসানো হয়।

বৃহস্পতিবার ওই মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কিছু টানেল কাজ করছে না, একটিতে বিদ্যুতের সংযোগই লাগানো নেই।

অনেক মন্ত্রণালয়ের মতো স্থানীয় সরকার বিভাগের এই জীবাণুনাশক টানেলটি আর সচল নেই।

স্থানীয় সরকার বিভাগ ছাড়াও আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের জীবাণুনাশক টানেলগুলো কাজ করছে না।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জীবাণুনাশক টানেল সচল থাকলেও সেসবের ভেতর দিয়ে কাউকে পার হতে দেখা যায়নি। টানেলের পাশ দিয়েই বেশিরভাগ মানুষ যাতায়াত করছেন।

এই বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে এখনও নিষেধাজ্ঞা থাকায় যারা অফিস করছি সবাই সবাইকে চিনি। ফলে আমাদের কাজ করতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

“ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় জন্য নিজেকেই সব থেকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কি করা হয়েছে আর কি করা হয়নি সেটা নিয়ে বসে থাকলে হবে না।”

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি জীবাণুনাশক টানেলে বিদ্যুৎ সংযোগই লাগানো নেই।

সচিবালয়ের ২১তলা বিশিষ্ট ছয় নম্বর ভবনের ছয়টি লিফটের মধ্যে পাঁচটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওঠানামায় ব্যবহৃত হয়। সকালে অফিস শুরুর সময় এবং দিনের অন্য সময় যখন ভিড় থাকে তখন এই লিফটগুলোতে গাদাগাদি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উঠতে দেখা যায় বৃহস্পতিবার।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন লিফটম্যান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে যখন লাইন পড়ে যায়, তখন আমরা বিপদে পড়ে যাই, কেউ কথা শুনতে চান না। লিফটে ভিড় হলে তো আমাদেরও ঝামেলা।”

আরেকজন লিফটম্যান বলেন, “অনেকে আছেন লিফট উঠে পরিচিতজনদের দেখে মাস্ক খুলে গল্প শুরু করেন। অনেক সময় সিনিয়র স্যারদের এ নিয়ে কিছু বলতেও পারি না।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর চার নম্বর ভবনে প্রবেশের মাঝের গেইটে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন বসিয়ে সেখানে সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছিল।

নৌ মন্ত্রণালয়ের জীবাণুনাশক টানেলগুলো কাজ না করলেও কোভিড-১৯ নিয়ে সতর্কবার্তা ফটকে ঝুলছে।

এখন সেখানে ওই বেসিন থাকলেও কোনো সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই। দীর্ঘদিন ধরে কেউ বেসিনটি ব্যবহার করে না এই ভবনের কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

এসব বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কি না, সেটি তারা নজরে রাখছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, “কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঠিকমত স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে তথ্য পেলে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হবে।”