রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতি তদন্তের প্রতিবেদন শিগগির: ডিজি

রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকাভুক্তি ও জাতীয় পরিচয়পত্র জালায়াতির ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি ‘শিগগির’ প্রতিবেদন দেবে বলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2020, 02:19 PM
Updated : 24 Sept 2020, 02:19 PM

ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়া পর জালিয়াত চক্রে জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ‘দুর্নীতি ও এনআইডি জালিয়াতি রোধে নেওয়া পদক্ষেপ’ তুলে ধরতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাইদুল ইসলাম।

প্রায় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক তথ্যসহ আলাদা রোহিঙ্গা ডেটাবেজ স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যেও জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে গত বছর ঘটনা তদন্তে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে অনুসন্ধান টিম পাঠানো হয়। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অধিকতর তদন্তে একটি কারিগরি এবং একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হয়।

এনআইডি উইং ডিজি সাইদুল বলেন, “গেল শুক্র, শনি, রবি ও সোমবার তদন্ত কমিটি সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ডেটা এন্ট্রির কাজের ল্যাপটপ খোয়া যাওয়ার পর সেগুলো কে কে ব্যবহার করেছে, কীভাবে তা ব্যবহৃত হয়েছে, ঘরে-বাইরে কারা সম্পৃক্ত ছিল এ জালিয়াতিতে- প্রতিটি বিষয় আমরা এনালাইসি করছি। এখন তদন্ত কমিটি দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দেবে।”

প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনৈতিক কাজ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন বা এনআইডি উইংয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক এটা আমরা কিছুতেই চাই না। জালিয়াতিতে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

তদন্ত কমিটিতে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রতিনিধি রয়েছে। অপরদিকে অধিকতর তদন্তের সুবিধার্থে একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হয়।

সাময়িক বহিষ্কারের পর মামলাও হবে

এনআইডি জালিয়াতিতে সম্পৃক্ত দুই ডেটা এন্ট্রিঅপারেটেরকে প্রকল্প থেকে চাকরিচ্যুতি ছাড়াও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এনআইডি উইং মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগকৃত এসব লোকবল অনিয়মে জড়িত হলে চাকরিচ্যুত করা হয়।

“কিন্তু এরপরও অনেকে কৌশলে জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ে। এজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো জালিয়াতকারীকেই ছাড় দেব না।”

ঢাকায় এনআইডি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আইডিইএ প্রকল্পের আউটসোর্সিং ডেটা এন্ট্রি অপারেটর দুইজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৮ বছরে সর্বমোট ৩৯ জনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।

লাখো দ্বৈত ভোটারের বিষয়ে তৎপরতা

ভোটার তালিকা হালনাগাদে প্রায় দুই লাখের মতো দ্বৈত ভোটার শনাক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান এনআইডি উইং মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম ।

তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে দুই লাখ সাত হাজার দ্বৈত ভোটার শনাক্ত করেছি। যারা দ্বৈত হয়েছে আমরা তাদের নোটিফাই করছি। এসএমএসের মাধ্যমেও তাদের জানিয়ে দিচ্ছি। তবে সবার মোবাইল নম্বর না থাকায় উপজেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে তাদের অবহিত করার ব্যবস্থা করছি।”

দ্বৈত ভোটার পাওয়া গেলে প্রাথমিকভাবে বিধি মোতাবক প্রথমটি রেখে পরবর্তী ভোটার তথ্য ব্লক করে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্য গোপন করে দ্বৈত ভোটার হওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ইতোমধ্যে ৯৩৭ জনের এনআইডি লক করাসহ ‌আইন অনুসারে নির্বাচন কমিশন ফৌজদারি মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দিয়েছে। এ কাজে সম্পৃক্ততা ও  অবহেলার বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“দ্বৈত ভোটারের সবার বিষয়গুলো আমরা অবজার্ভ করছি। আমরা দেখছি উদ্দেশ্য কী ছিল। তবে আমরা সবার বিরুদ্ধে মামলা করিনি, করবও না। যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব। তবে কেউ যদি সে বিষয়ে কমিশনে আবেদন করে, সেটি আমরা যাচাই-বাছাই করে কারণ জানব, যে কোন উদ্দেশ্যে তারা এটি করেছে। সেটি আমরা কমিশনকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেব,” বলেন এনআইডি উইং মহাপরিচালক।

ইতোমধ্যে দেশব্যাপী এনআইডি সেবা কার্যক্রম তদারকিতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী ১০টি টিমের মাধ্যমে সাঁড়াশি ও ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হবে।