২৫ দিনে ৩ বার দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ, তাফসিরের অন্য সন্দেহ

পঁচিশ দিনে তৃতীয়বার দুর্নীতি দমন কমিশনে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে মাল্টিমোড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাফসির আউয়াল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2020, 12:12 PM
Updated : 24 Sept 2020, 12:29 PM

নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনে একাধিক ব্যাংক হিসাব খুলে নিজের মালিকানাধীন কোম্পানির ‘কোটি কোটি টাকা লেনদেনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এই জিজ্ঞাসাবাদের কথা দুদক কর্মকর্তারা জানালেও তাফসিরের সন্দেহ, তার পারিবারিক ঝামেলায় অজান্তেই ঢুকে পড়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।

তাফসিরকে গত ১০ সেপ্টেম্বর এবং তার আগে ৩১ অগাস্ট দুদক ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর হাজির হতে পুনরায় তলব করে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তাফসিরকে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে তাফসির সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মনে করি, আমার একটা পারিবারিক ঝামেলার কারণে আমার এখানে আসা হল। এই কারণেই আমাকে ডাকা হচ্ছে। আমার ধারণা বিষয়টি দুদক জানে না।”

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আউয়াল মিন্টুর দ্বিতীয় ছেলে তাফসির যুক্তরাজ্যে পড়াশুনা করেন। তিনি বিয়ে করেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর মেয়েকে।

সম্প্রতি তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে বলে পারিবারিক সূত্র জানায়। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। তার অভিভাবকত্ব নিয়ে মা-বাবা দুজনে লন্ডনে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। দুদকের নোটিস পেয়েই লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন তাফসির।

মিন্টুপুত্র বলেন, “আমার পারিবারিক ঝামেলা চলছে লন্ডনে। লন্ডনের আদালত আমাকে অনুমতি দিয়েছিল, আমার ২০ মাস বয়সী ছোট একটি মেয়ে আছে ওকে দেখার জন্য। আমি মনে করি, আমাকে এখানে নিয়ে আসা ও দেশে রেখে দেওয়া... যেন মেয়েকে না দেখতে পাই।

“আমি চাচ্ছিলাম আমার মেয়েকে দেখতে, এখন যদি আবার ডাকে, তবে দেখার সম্ভাবনা থাকবে না। যদি না ডাকে তাহলে আমি মেয়েকে দেখার জন্য (লন্ডন) যাব।”

তাফসিরের ভাই তাবিথ আউয়াল বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। বিএনপির মনোনয়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন তিনি।

তাফসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআইএফআইউ থেকে বেশ কিছু রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

ওই চিঠিতে আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং তার সন্তানদের নামে বিদেশি কোম্পানি এনএফএম এনার্জির নামে যুক্তরাজ্যের একটি ব্যাংকের লন্ডন শাখা এবং যুক্তরাষ্ট্রে দুটি ব্যাংকের নিউ ইয়র্ক ও পিটসবার্গ শাখার কয়েকটি অ্যাকাউন্টের তথ্য, থাইল্যান্ডে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট নিবন্ধন এবং লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য এবং বারমুডায় নিবন্ধিত ‘এনএফএম এনার্জি লিমিটেড’ এর (যার শেয়ারধারী হিসেবে আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়ালের নাম রয়েছে) তথ্য চাওয়া হয়।

এছাড়া সিঙ্গাপুরে যৌথ মালিকানায় নিবন্ধিত এনএফএম এনার্জিতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যও চাওয়া হয় বিআইএফইউতে পাঠানো চিঠিতে।

প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাফসির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “উনারা আমাকে অনেক বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন, আমি উত্তরও দিয়েছি। দুদক দুদকের কাজ করে যাচ্ছে। এতে আমার কোনো অসুবিধা নেই, আপত্তিও নেই।”

যে সব অভিযোগের বিষয়ে দুদক নথিপত্র চেয়েছে সেগুলো জমা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কি না- জানতে চাইলে তাফসির সেদিন বলেছিলেন, “দুদকের কাছে কে অভিযোগটা দিয়েছে, বা কী কারণে অভিযোগটা এসেছে- এটা নিয়ে হয়তোবা আমার একটু অসুবিধা আছে। মনে হয় এটি (অভিযোগ) ব্যক্তিগত কারণে করেছে, সেটা হয়তে দুদক জানে না।”