ভিআইসি স্থাপনের অগ্রগতি জানতে চাইল হাই কোর্ট

ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দিতে ‘মোটরযান পরিদর্শন কেন্দ্র (ভিআইসি)’ স্থাপনের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2020, 04:14 PM
Updated : 23 Sept 2020, 04:14 PM

বিআরটিএ’কে আগামী দুই মাসের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে।

গাড়ি ফিটনেস পরীক্ষা ও নবায়ন সংক্রান্ত বিআরটিএ’র বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দেখে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাই কোর্টে বেঞ্চ বুধবার এ আাদেশ দেয়।

আদালতে বিআরটিএ’র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইনজীবী রাফিউল ইসলাম। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর-উস সাদিক।

পরে বিআরটিএর আইনজীবী রাফিউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,

“ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) স্থাপনের জন্য কী পদক্ষেপ বিআরটিএ গ্রহণ করেছে, তার অগ্রগতি জানাতে বলেছে হাই কোর্ট।

“যেহেতু এটা টেন্ডারের বিষয় তাই বিআরটিএর পক্ষ থেকে দুই মাস সময় চাওয়া হয়েছিল। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। দুইমাস পর বিষয়টি আবার আদশের জন্য আসবে।”

ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য ১৯৯৮ সালে দেশের চারটি বিভাগীয় শহরে ৫টি (এর মধ্যে ঢাকায় ২টি,চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনায় ১টি করে) মোটরযান পরিদর্শন কেন্দ্র (ভিআইসি)স্থাপন করা হয়।

তার মধ্যে ঢাকার মিরপুরে ভিআইসি ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক মোটরযানের ফিটনেস পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দেওয়া শুরু করলেও বাকিগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বিআরটিএ’র আইনজীবীর কাছে।

রাফিউল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারাদেশে মাত্র একটি ভিআইসি সক্রিয় আছে, যেটি মিরপুরে। তবে আরও ১২ ভিআইসি স্থাপনের জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এই ১২টি ঢাকাতে হবে।”

দেশের ৬৪ জেলায় ভিআইসি স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, “ভিআইসি স্থাপনের জন্য গত বছর বিআরটিএ প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছে জমি অধিগ্রহণ করার জন্য চিঠি দিয়েছে। ময়মনসিংহ, দিনাজপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় জায়গা অধিগ্রহণ বা কেনা হয়েছে।”

এ আইনজীবী বলেন, “কোর্টের একটা আদেশ ছিল গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার জন্য। দেশের যে কোনো জয়গা থেকে যেন গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা যায় এমন একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।

“বিআরটিএ গত বছর ১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটা সার্কুলার জারি করে। সে সার্কুলার অনুযায়ী একটা গাড়ির রেজিস্ট্রেশন যেখানেই থাকুক না কেন, ফিটনেস নবায়ন যে কোনো জায়গায় বিআরটিএ কার্যালয় থেকে ফিটনেস নিতে পারবে। আর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রাইভেট গাড়ির ক্ষেত্রে ফিটনেসের মেয়াদও দুই বছর বাড়িয়ে আরেকটি সার্কুলার দিয়েছিল।

“এগুলোর বাস্তবায়ন প্রতিবেদন আজকে আমরা দাখিল করেছি আদালতে এবং বলেছি, এই রিটে জারি করা প্রত্যেকটা রুল বাস্তবায়ন পর‌্যায়ে রয়েছে। কতগুলো বাস্তবায়ন হয়েছেও।”

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেস জরিপে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ২০১৮ সালের ৯ জুলাই বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানকে আইনি নোটিস দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

নোটিসে যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেস জরিপে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ১০ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়।

এই নোটিসের জবাব না পেয়ে ওই বছরের ২৬ জুলাই রিট আবেদন করা হয়।

এ রিট আবেদনে হাই কোর্ট ওই বছরের ৩১ জুলাই এক আদেশে সারাদেশে ফিটনেসবিহীন পরিবহন সনাক্ত করার জন্য কমপক্ষে ১৫ সদস্যের একটি জাতীয় নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে সরকারকে নির্দেশ দেয়।

এই কমিটিকে যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেস জরিপ করে একটি প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া জারি করা রুলে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে বিবাদিদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে গণপরিবহনের ফিটনেস নিশ্চয়তা ও নজরদারীতে বিবাদিদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এরপর ওই বছরের ২৩ অক্টোবর ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিআরটিএ আদালতকে জানায়।

এরই ধারাবাহিকতায় বিআরটিএ আদালতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক প্রতিবেদন দাখিল করে।

বিআরটিএর গত বছরের হিসাব মতে, সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮টি।

এর মধ্যে ২৮ লাখ ১৬ হাজার ৬৩৪টি মোটরসাইকেল, ২ লাখ ৯৪ হাজার ৯২০টি অটোরিকশা, ২০ হাজার ৭৯৬টি অটো টেম্পো রয়েছে।

মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা ছাড়া অন্য সব যানবাহনের জন্যই প্রতিবছর ফিটনেস সনদ নবায়ন করতে হয়।