বিশৃঙ্খলা না করে ধৈর্য ধরতে সৌদি প্রবাসীদের প্রতি মন্ত্রীদের আহ্বান

সৌদি আরবে ফিরতে বিমানের টিকেট না পেয়ে চাকরি হারানোর শঙ্কা থেকে যারা বিক্ষোভে নেমেছেন, তাদের বিশৃঙ্খলা না করে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দুজন মন্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2020, 03:27 PM
Updated : 23 Sept 2020, 04:55 PM

বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে বৈঠক করে এই জটিলতার অবসান ঘটাতে সোমবার পর্যন্ত সময় নিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

উৎকণ্ঠিত প্রবাসীদের ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে সরকারি উদ্যোগে ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যে এক হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে, তার মধ্যে ৪০১ কোটি ৫১ লাখ ডলারই সৌদি প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন।

করোনাভাইরাস মহামারীকালে সৌদি আরব প্রবাসী যারা দেশে এসেছিলেন, দেশটির সরকার বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করলেও বাংলাদেশ থেকে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিপত্তি।

সৌদি আরবের অনুমতি না মেলায় এখনও সেদেশে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে পারেনি বিমান। ফলে সৌদিতে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি বিমানের টিকেট কেটে রেখেও যেতে পারছেন না। অন্যদিকে ফ্লাইট কম থাকায় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সও এত যাত্রীর চাপ নিতে পারছে না।

এই পরিস্থিতিতে সৌদি প্রবাসী কর্মীরা বিক্ষোভে নেমেছেন। তারা বিমান ও সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স অফিসের সামনে দুদিন বিক্ষোভের পর বুধবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনেও বিক্ষোভ করেছেন।

তারা বলছেন, এ মাসের মধ্যে সৌদি আরব যেতে না পারলে অনেকেই চাকরি হারাবেন। সে কারণে তাদের দ্রুত ফেরার ব্যবস্থা করা জরুরি। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সেখানে যাওয়ার টিকেটও লাগবে তাদের।

দুপুরের পর বিক্ষুব্ধ সৌদি প্রবাসীদের ছয়জন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসেন মন্ত্রী ইমরান আহমেদসহ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।

সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকে মন্ত্রী মহোদয় সৌদি প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন।”

মন্ত্রী প্রবাসীদের এভাবে সড়ক বিক্ষোভ না করার পরামর্শও দিয়েছেন।

“প্রবাসীদের অনুরোধ করে তিনি বলেছেন, তারা যেন রাজনৈতিকভাবে কারও দ্বারা প্রভাবিত না হন। কারণ তারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে,” বলেন জনসংযোগ কর্মকর্তা রাসেদুজ্জামান।

কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে মঙ্গলবার বিক্ষোভে সৌদি আরব প্রবাসীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

বুধবার সকাল ৯টার দিকে কয়েকশ প্রবাসী কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে সড়কে অবস্থান নেন, যেখানে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের অফিস। এতে কিছু সময়ের জন্য সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর বেলা ১১টার দিকে তারা ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের আরেকটি দল বেলা ১২টার দিকে মতিঝিল থেকে মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।

প্রবাসীদের অবস্থা নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “প্রবাসী ভাইবোনদের বলব, আপনারা ধৈর্য ধরুন। ধৈর্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

“সৌদি সরকার যদি দেখে, তাদের আইনশৃঙ্খলার প্রতি জটলা দেখানো হয়, ওরা পছন্দ করবে না। সৌদি আরব মোটেই বরদাশত করে না, শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে তারা পছন্দ করে না।”

বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, “তারা যদি দেখে আন্দোলন করছে, জটলা করছে, তারা ভিসা বাতিল করে দিতে পারে। ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে দিতে পারে। তারা এটা করলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। আমার এই প্রবাসীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”

আগেও এমন ঘটনার উদাহরণ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাজে ধারণা যেন সৃষ্টি না হয়। সৃষ্টি হলে যারা এগুলো করছেন তাদের পায়ে কুঠার পড়বে। সে ব্যাপারে সজাগ হন। আপনারা প্ররোচনায় পড়বেন না। এমনটা হলে আপনাদেরই ক্ষতি হবে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেন

সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা সৌদি সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছি, ভিসা ও ইকামার মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোর জন্য, তারা যাতে বিনা খরচে ফেরত যেতে পারে।

“সৌদি সরকার এখনও কিছু জানায়নি। .... আমাদের রাষ্ট্রদূত কাজ করছেন। আশা করছি, তারা আমাদের উপর সদয় হবেন।”

টিকেট সুলভ করতে সৌদি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে যারা প্রবাসীদের নিতে আসতে চায়, তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান মোমেন।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের বিমান প্রস্তুত আছে। যে মুহূর্তে তারা বিমানের ল্যান্ডিং রাইটটা দিবে, সাথে সাথে বিমান মুভ করবে। যারা আগে টিকেট করেছে, আগে ডেট আছে, তাদের আগে নিয়ে যাবে।”

এদিকে সঙ্কটকালীন এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরবে দুটি বিশেষ ফ্লাইট চালানোর ঘোষণা দিয়েছে বিমান। নিয়মিত ফ্লাইটের অনুমতি না মিললেও বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি রয়েছ তাদের।

আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর একটি ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে এবং ২৭ সেপ্টেম্বর আরেকটি ফ্লাইট রিয়াদের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বুধবার বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

এদুটি ফ্লাইটে কেবল তারাই যেতে পারবেন, যাদের সৌদি আরবে ফেরার টিকেট (রিটার্ন টিকিট) কেটে রাখা ছিল।

মোকাব্বির খান বলেন, ১৬ ও ১৭ মার্চ জেদ্দা ও রিয়াদের বিমানের রিটার্ন টিকেটধারীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট দুটি চালানো হবে।

এই ফ্লাইটে বুকিংয়ের জন্য বিমানের সেলস অফিসে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তিনি।

আটকে পড়া বাকিদের বিষয়ে বিমান এমডি বলেন, “ফ্লাইট অনুমোদন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অন্য যাত্রীদেরও বুকিংয়ের জন্য অবহিত করা হবে। অন্য যাত্রীদের এখন অযথা কাউন্টারে ভিড় না করতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।”

এই যাত্রীদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।

মোকাব্বির বলেন, “কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক এবং নমুনা সংগ্রহের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সৌদি আরব পৌছতে হবে বলে সব যাত্রীকে ঢাকা থেকে কোভিড পরীক্ষা করতে হবে এবং ঢাকা থেকেই যাত্রা করতে হবে।”