অর্থ বিভাগের দুটি সার্কুলার বাতিলের দাবি

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেওয়া বন্ধ করা নিয়ে অর্থ বিভাগের দুটি সার্কুলার বাতিলের দাবিতে অর্থমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2020, 01:17 PM
Updated : 23 Sept 2020, 01:17 PM

‘গভার্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ’ এর মহাসচিব মো. নজরুল ইসলামের স্বাক্ষরে বুধবার অর্থমন্ত্রীকে ওই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়েছে, ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শুরু হওয়া উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সহজ ও সরলীকরণ নীতি ও পদ্ধতি অনুসারে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থানান্তর করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০০৫ সালের ২০ জুনে জারি করা ‘উন্নয়ন প্রকল্প হইতে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা’য় বলা হয়েছে, “উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়মিত হওয়া কর্মচারীদের চাকরিকাল গণনার ক্ষেত্রে ‘নিয়মিতকৃত কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীর উন্নয়ন প্রকল্পে চাকরিকাল তার বেতন, ছুটি, পেনশন ও আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি নির্ধারণে ক্ষেত্রে গণনা করা হইবে।”

কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের প্রকল্পের চাকরিকাল গণনা করে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড দেওয়ার অবকাশ নেই জানিয়ে ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে মতামত দেয় অর্থ বিভাগ।

এরপর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধিমালার সঙ্গে অর্থ বিভাগের মতামত সাংঘর্ষিক ও পরস্পরবিরোধী জানিয়ে এর সমাধানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ধর্না দেন।

এ অবস্থায় বিষয়টি স্পষ্ট করে অর্থ বিভাগ ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানায়, ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ অর্থ বিভাগ যে মতামত দিয়েছিল তা এ সংক্রান্ত বিধিমালার সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক বা অসঙ্গতিপূর্ণ নয়’।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগের ১৯৮৪ সালের ১ ডিসেম্বরের অফিস স্মারক অনুযায়ী, আত্মীকৃত বা দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কর্মরতদের চাকরিকাল অনুসারে অর্থাৎ চাকরির ৮, ১২ ও ১৫ বছর পূর্তিতে পর পর তিনটি উচ্চতর স্কেল দেওয়ার বিধান রয়েছে।

১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উচ্চতর স্কেল সুবিধা ভোগ করছিলেন জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগের ওই মতামত ও ব্যাখ্যার ফলে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে নিয়মিত হওয়া শত শত অবসরমুখী ও পেনশনগামীদের পেনশন তোলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ওই মতামত ও ব্যাখ্যা প্রত্যাহার কিংবা পরবর্তী সময়ে অর্থ বিভাগ কোনো প্রশাসনিক আদেশ জারি না করায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুলো বর্তমানে পেনশনের আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করতে পারছে না বলেও স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়েছে।

হিসাব মহা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকেও পেনশনের আবেদনগুলো ‘অহেতুক’ আটকে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে স্মারকলিপিতে।

অর্থ বিভাগের ওই দুটি সার্কুলার ধরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পেনশনগামী ও অবসরমুখী কর্মচারীদের পেনশন থেকে অন্যায়ভাবে ২০ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু কর্মচারীর বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেলের আগে দেওয়া তিনটি উচ্চতর বেতন স্কেল পাওয়ার সময় পার হলেও তা দেওয়া হচ্ছে না।

বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নতুন করে সমন্বয় করে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়েছে।

“জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এআরওমূলে জারি করা বিধিমালাকে সরকারের অন্য কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের আদেশ, সার্কুলার, মতামত বা ব্যাখ্যার মাধ্যমে কখনোই অতিক্রম করা যায় না বলে বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে নিষ্পত্তি জরুরি হয়ে পড়েছে।”

১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিলে থেকে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুনের তারিখের মধ্যে শুরু হওয়া উন্নয়ন প্রকল্প থেকে যারা রাজস্বখাতে স্থানান্তিত হয়েছেন তাদের উন্নয়ন ও রাজস্ব উভয় চাকরিকালের ভিত্তিতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেওয়া বন্ধ করা সংক্রান্ত অর্থ বিভাগের দুটি সার্কুলার বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন সচিব এবং হিসাব মহানিয়ন্ত্রককে স্মারকলিপির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।