স্বাস্থ্যের ৪৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অঢেল সম্পত্তির উৎসের খোঁজে দুদক

বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত ৪৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পত্তির উৎসের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তাবারুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2020, 05:36 PM
Updated : 22 Sept 2020, 05:36 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোটিপতি গাড়িচালক আব্দুল মালেক র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুদক সচিব দিলোয়ার বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।

ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য খাতের ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ২০ জনের সম্পত্তির হিসাবও চেয়েছে দুদক।

৪৫ জনের তালিকায় এই ১২ জন ছাড়াও মালেকের নামও রয়েছে।

দুদক সচিব বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তির সন্ধান পাওয়ায় স্ত্রীসহ তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ১৬ সেপ্টেম্বর নোটিস পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচার করছেন এমন অভিযোগ পেয়ে ২০১৯ সাল থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে এই ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ মিলেছে।”

দুদকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করা হবে। ১০ জনের সম্পদ বিবরণী যাচাই চলছে এবং সম্পদের হিসাব চেয়ে আরও ১১ জনকে নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

তালিকায় যারা

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (প্রশাসন-২) কবির আহমেদ চৌধুরী ও হুমায়ুন কবীর, কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল অ্যাডুকেশন শাখার অফিস সহকারী খাইরুল আলম।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক মজিবুর রহমান, খুলনার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার উচ্চমান সহকারী রেজাউল ইসলাম, মহাপরিচালক দপ্তরের সহকারী প্রধান মো. জোবায়ের হোসেন রয়েছেন।

অন্যদিকে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী এম কে আশেক নওয়াজ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই ভবন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর তোফায়েল আহমেদ ভূইয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার অফিস সহকারী কামরুল হাসান, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (ইপিআই) মজিবুল হক মুন্সি, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওবাইদুর রহমান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব রক্ষক ইমদাদুল হক আছেন দুদকের অনুসন্ধানের তালিকায়।

এছাড়া র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত গাড়িচালক আব্দুল মালেক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহমুদুজ্জামান, শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর অফিসার নাজিম উদ্দিন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের সহকারী প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মীর রায়হান আলী, গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর সাইফুল ইসলামও রয়েছেন।

অফিস সহকারী আবজাল হোসেন

গাড়িচালক আব্দুল মালেক

আর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক এ টি এম দুলাল, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, মুগদা মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক আবদুল্লাহ হেল কাফি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফারুক হাসান, প্রধান সহকারী আশরাফুল ইসলাম ও সাজেদুল করিম, উচ্চমান সহকারী তৈয়বুর রহমান ও সাইফুল ইসলামের নাম রয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী ফয়জুর রহমান, রংপুর মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আলিমুল ইসলাম, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ল্যাব সহকারী আব্দুল হালিম ও সুব্রত কুমার দাস, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সচিব আনায়ার হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি চালক শাহজাহান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের স্টোর কর্মকর্তা দেলোয়ার হাসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্টোর ম্যানেজার (ইপিআই) হেলাল তরফদার আছেন এই তালিকায়।

এছাড়া ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. আবুল কালাম মো. আজাদ, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতারের স্টোর কিপার সাফায়েত হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টোর কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাব রক্ষক আব্দুল মজিদ মিয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।

দুদক উপ-পরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিশেষ টিম স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির অনুসন্ধান করছেন। এই টিমের অপর সদস্যরা হলেন- কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান ও ফেরদৌস রহমান।