প্রধানমন্ত্রীর ৬ মাসের নির্দেশনা বইয়ে হল ২ হাজার পৃষ্ঠা

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় শেখ হাসিনা যে সব নির্দেশাবলি দিয়েছেন, ভবিষ্যতে যে কোনো মহামারী মোকাবেলায় নীতি-নির্ধারকদের জন্য তা বই আকারে সংরক্ষণ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2020, 02:57 PM
Updated : 22 Sept 2020, 03:02 PM

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন সঙ্কলন করা হচ্ছে।

গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যেসব নির্দেশনা জারি করেছে, তা বইয়ে ১ হাজার ৯৭৬ পৃষ্ঠায় দাঁড়িয়েছে। এসব নির্দেশনা বই আকারে ৫টি ভলিউমে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সচিব তোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভবিষ্যতে করোনা মহামারীর মতো দুর্যোগ মোকাবেলার কথা চিন্তা করে এসব নির্দেশনা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

করোনাভাইরাসের রোগী গত মার্চে দেশে প্রথম শনাক্ত হলেও চীনে সংক্রমণের পর থেকে সরকারের উদ্যোগে মহামারী মোকাবেলার প্রস্তুতি চলছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে থেকেই মহামারী মোকাবেলায় নানা নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সভা চালিয়ে যাচ্ছেন তিন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যেসব নির্দেশনা জারি করেছে, তার পরিমাণ দেখলে কিছুটা অনুমান করা যায় এই করোনার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দিনরাত কতটা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।”

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি বিষয়ের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন।

সরকারের কাজ গতিশীল রাখার পাশাপাশি এই সময়ে সংসদেও যোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতেও নিয়মিত যুক্ত হচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

“স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনি প্রতিটি বিষয়, প্রতিটি মহূর্ত মনিটর করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজের জীবনের চেয়ে দেশ ও দেশের জনগণকে বড় মনে করেন। তাই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।”

করোনাভাইরাস মহামারী থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি অর্থনীতি সচল রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।

এপর্যন্ত মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার (জিডিপি’র ৪ দশমিক ৩ শতাংশ) ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার।

এক নজরে ২১ প্রণোদনা

>> রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল (মোট বরাদ্দ ৫,০০০ কোটি টাকা)।

>> ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান (মোট বরাদ্দ ৩৩,০০০ কোটি টাকা)।

>> ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান (মোট বরাদ্দ ২০,০০০ কোটি টাকা)।

>> বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবির্তিত ইডিএফের সুবিধা বাড়ানো (মোট বরাদ্দ ১২,৭৫০ কোটি টাকা)।

>> প্রাক জাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল (মোট বরাদ্দ ৫,০০০ কোটি টাকা)।

>> চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানী (১০০ কোটি টাকা)।

>> করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অথবা মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ (৭৫০ কোটি টাকা)।

>> বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ (মোট বরাদ্দ ২,৫০৩ কোটি টাকা)।

>> ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি  (মোট বরাদ্দ ২৫১ কোটি টাকা)।

>> লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ (মোট বরাদ্দ ১২,৫৮ কোটি টাকা)।

>> ভাতা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি (মোট বরাদ্দ ৮১৫ কোটি টাকা)।

>> গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ (মোট বরাদ্দ ২১৩০ কোটি টাকা)।

>> বোরো ধান/চাল ক্রয় কার্যক্রম (মোট বরাদ্দ ৮৬০ কোটি টাকা)।

>> কৃষি কাজ যান্ত্রিকীকরণ (৩,২২২০ কোটি টাকা)।

>> কৃষি ভর্তুকি(৯৫০০ কোটি টাকা)।

>> কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম (মোট বরাদ্দ ৫,০০০ কোটি টাকা)।

>> নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম (মোট বরাদ্দ ৩,০০০ কোটি টাকা)।

>> কর্মসৃজন কার্যক্রম (পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পিকেএসএফ এর মাধ্যমে ২,০০০ কোটি টাকা)।

>> বাণিজ্যিক ব্যাংকসমুহের এপ্রিল-মে/২০২০ মাসে স্থগিতকৃত ঋণের আংশিক সুদ মওকুফ বাবদ সরকারের ভর্তুকি (২,০০০ কোটি টাকা)।

>> এসএমই খাতের ঋণের দায়িত্ব গ্রহণ (২,০০০ কোটি টাকা)

>> রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পের দুস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম (১,১৩২ কোটি টাকা)।