ধরার পর ছেড়ে দেওয়া হল ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরকে

ধর্ষণের মামলা হওয়ার পর ভিন্ন অভিযোগে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 03:13 PM
Updated : 21 Sept 2020, 08:46 PM

সোমবার রাতে ঢাকায় এ্ক বিক্ষোভ মিছিল থেকে নুর ও তার সাত সহযোগীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

ধর্ষণের অভিযোগে এক তরুণী মামলা করার পর তা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে এই বিক্ষোভ করছিল নূরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বের হওয়া মিছিলটি মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে গোলযোগ বাঁধে। নূরসহ সাতজনকে সেখানে আটক করে পুলিশ।

তখন ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স) ওয়ালিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।”

তবে তার ১০টার দিকে নুরকে দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পুলিশের হামলায় আহত পরিষদের নেতা-কর্মীরা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।  

এদিকে ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত পাঁচজন পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

তারা হলেন- এসআই সুজন চন্দ্র দে, এএসআই গোলাম হোসেন, কনস্টেবল জাহিদ হাসান, মঞ্জুরুল হক ও কামাল হোসেন।

তখন জানতে চাইলে মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নুরকে আটকই করা হয়নি। অনুমতি ছাড়া মিছিল করায় তাকে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নূরকে প্রাইমারি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। সে কিছুটা অসুস্থ্য বোধ করছে। প্রাইমারি ট্রিটমেন্টের পরে ছেড়ে দেওয়া হবে। সাত জনকে আটক করা হয়েছিল। তাদের সবাইকেই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

তবে নুরকে হাসপাতাল থেকে গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে নেওয়া হয়। সেখান থেকে মধ্যরাতে ছাড়া পান তিনি।

রাত ১টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে থেকে বেরিয়ে নুর সাংবাদিকদের বলেন, মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

“আমরা বুঝলাম না, আমাদের উপর কেন আক্রমণ করা হল, কেন গ্রেপ্তার করা হল? আবার কেনইবা ছেড়ে দেওয়া হল? রাষ্ট্রযন্ত্রের কারও সাথে কারও মিল নাই, একজন মারে-ধরে, আরেকজন ছেড়ে দেয়। আমি আগেও বলেছি এদেশে বিচার নাই, আইনের শাসন নাই, গণতন্ত্র নাই।”

ডিবি কার্যালয়ে কোনো অত্যাচার হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাকে তো পুলিশ স্পটেই সিনেমা স্টাইলে জাম্প করে লাথি মেরেছে, কাঠ দিয়ে মেরেছে। ডিবি কার্যালয়ে আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তা থেকেই আমাদের আধা মরা করে ফেলছে।”

তাদের মিছিলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে হামলা করে বলে অভিযোগ করেন নুর।

“আপনারা জানেন আমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সেই মামলার প্রতিবাদে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সেই মিছিল শেষ করে যখন মৎস্য ভবনের দিকে আসতেছিলাম, তখন পুলিশ অতর্কিতভাবে রড, হকিস্টিক, কাঠ নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে।

“আমাদের অনেককে বেধড়ক মারধর করেছে, অনেকে অসুস্থ। আমাদের কয়েকজনের অবস্থা খুবই খারাপ। এখন আমাদের বেশ কয়েকজনের চিকিৎসা নেওয়া লাগবে।”
‘ষযড়ন্ত্রমূলক’ মামলা এবং পুলিশের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী রোববার রাতে লালবাগ থানায় নূরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

মামলার প্রধান আসামি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হাসান আল মামুন, যিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। নূর এই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।

পরিষদের আরও দুই যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ (২৮) ও সাইফুল ইসলাম (২৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা (২৫) ও কর্মী আবদুল্লাহ হিল বাকিকে (২৩) মামলাটিতে আসামি করা হয়েছে।

লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার প্রতিক্রিয়ায় হাসান আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। যে অভিযোগের কথা বললেন, এমন কোনো কিছু আমাদের দ্বারা হয়নি।

“এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আমরা প্রতিবাদ জানাব।”

এরপরই সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল ছাত্র অধিকার পরিষদ।

টিএসসিতে সমাবেশ করে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় মৎস্য ভবন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গোলযোগের পর গ্রেপ্তার করা হয় নুরুল হক নুরকে।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্য়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে পরিষদের নেতা-কর্মীরা।

এসময় নূর, পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, সোহরাব হোসেন, রাশেদ খান, মোহাম্মদ আতাউল্লাহসহ অর্ধশত নেতা-কমী উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে বক্তারা এই মামলাকে ‘মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও যড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যায়িতদ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

মামলার এজহারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি বেলা ১টার দিকে ওই ছাত্রীকে মামুন লালবাগের নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ রোডে তার বাসায় যেতে বলে। ওই ছাত্রীর ভাষ্য, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে’ সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

এরপর মামুনকে বিয়ের কথা বললে তিনি টালবাহানা শুরু করেন বলে ওই ছাত্রীর অভিযোগ।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ২০ জুন নুরের কাছে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। নূর তখন ‘মীমাংসার আশ্বাস’ দিলেও পরে অবস্থান পাল্টে তাকে ‘বাড়াবাড়ি করতে’ নিষেধ করেন।

এজাহারে বলা হয়েছে, “নূর বলছে, আমি যদি বাড়াবাড়ি করি, তাহলে তাদের ভক্তদের দিয়ে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে পতিতা বলে প্রচার করবে।”

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ছাত্র অধিকার পরিষদ গত বছর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন নুরু। এক সময় তিনি ছাত্রলীগে যুক্ত থাকলেও এখন তিনি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কড়া সমালোচক।