সগিরা মোর্শেদ হত্যা: অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল

দুই আসামির পক্ষে অব্যাহতির আবেদন দাখিল ও শুনানির জন্য সময় চাওয়ায়  তিন দশক আগে সগিরা মোর্শেদ হত্যার ঘটনার মামলায় অভিযোগ গঠন পিছিয়ে গেছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 08:57 AM
Updated : 21 Sept 2020, 08:57 AM

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ ৭ অক্টোবর আবারও অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন রাখেন।

ঘটনার সময় শিশু ছিল দাবি করে অপর আসামির বিচার শিশু আদালতে নেওয়ার আবেদনও একই দিন শুনানি হবে।

আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০) ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনের (৬৪) পক্ষে অব্যাহতির আবেদন দাখিল ও শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

আবেদনে তিনি বলেন, ‍যেহেতু আমরা এখনও কাগজপত্র পাইনি। অব্যাহতি চেয়ে আবেদনও তৈরি করতে পারিনি। সেকারণে শুনানির জন্য সময় চাই।

তখন বিচারক বলেন, “মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হাই কোর্ট আদেশ দিয়েছে। আপনি এর আগেরবারও সময় চেয়েছেন। আর কত? এটায় টাইম দিলে খুবই সমস্যা, আমরা তাড়াতাড়ি বিচারে যেতে চাই।”

এ সময় আসামিদের কাকে কাকে এজলাসে হাজির করা হয়েছে তা জানতে চান বিচারক।

কাজল বলেন, ‍“আমার মোয়াক্কেলকে এখানও কারাগার থেকে এজলাসে তুলতে পারেনি পুলিশ। তিনি রাস্তায় রয়েছেন। আমি আসামি পক্ষে মানবিক কারণে সময় চাই।“

বিচারক সময়ের আবেদনে ‘সামনের তারিখে শুনানি করবেন’ বলে আইনজীবী কাজলের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নেন।

এ সময় অপর আসামি মারুফ রেজার (৫৯) পক্ষে আইনজীবী দেওয়ান আব্দুন নাসের তার বিচার শিশু আদালতে স্থানান্তরের আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, ঘটনার সময় মারুফ রেজার বয়স ছিল ১৬ বছর ১০ মাস ২৬ দিন। সুতরাং তার বিচার শিশু আদালতে হবে।

বিচারক আবেদনটি আগামী তারিখে শুনানির জন্য রেখে দেন।

এসময় বাদী সাগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালামের ব্যক্তিগত আইনজীবী শহিদুল ইসলাম সরদার, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুঁলি আবদুল্লাহ আবু উপস্থিত ছিলেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌঁড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মারা যান।

৩১ বছর পরে গ্রেপ্তার সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) এবং মো. মারুফ রেজা (৫৯) এই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টেগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, স্ত্রীর কথায় প্ররোচিত হয়ে ছোট ভাইয়ের বউকে শায়েস্তা করার জন্য ২৫ হাজার টাকায় সে সময় বেইলি রোড এলাকার ‘সন্ত্রাসী’ মারুফ রেজাকে ভাড়া করেছিলেন ডা. হাসান। মারুফকে সহযোগিতার জন্য স্ত্রীর ভাই রেজওয়ানকে দায়িত্ব দেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে রিকশায় করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে যাওয়া সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার পর তার হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলার কথা বলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ রেজা।

এখন আবাসন ব্যবসায়ী ও বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে। ওই সময়ই তিনি গ্রেপ্তার হলেও তার নাম বাদ দিয়ে মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।

এরপর বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্যে মারুফ রেজার প্রসঙ্গ উঠে আসায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। পরে উচ্চ আদালতে গিয়ে এই মামলা আটকে দেন মারুফ। পরে তদন্তকালে আসামি মিন্টু ও মারুফ গ্রেপ্তার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় ঢাকার বিচারিক আদালত।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাই কোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।

পরের বছর ২৭ অগাস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আরেকটি আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

এরপর দীর্ঘ প্রক্রিয়া চড়াই-উৎরাই শেষে এখন মামলাটি পুনঃতদন্তের মাধ্যমে আদালতে এসেছে।

এ মামলায় চার আসামির বাইরে মিন্টু নামে আরেকজনকে আসামির তালিকায় রেখে পিবিআই বলেছে, যেহেতু মিন্টু আগের অভিযোগপত্রে আসামি ছিল সে কারণে এ অভিযোগপত্রেও আসামির তালিকায় তাকে রাখা হল।