জাল নথি: ২ কনস্টেবলসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ

ধর্ষণের মামলায় পাঁচ বছর আগে ঝিনাইদহের আদালতে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামির সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছে উল্লেখ করে জাল নথি দাখিল করায় পুলিশের দুই কনস্টেবলসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2020, 02:49 PM
Updated : 20 Sept 2020, 02:49 PM

দণ্ডিত কবির বিশ্বাসের আপিল ও জামিন আবেদনে জালিয়াতি ধরা পড়ায় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।

কনস্টেবল বিশ্বজিৎ, কনস্টেবল খায়রুল আলম, ঝিনাইদহের উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত বজলু বিশ্বাসের ছেলে তদবিরকারক চাঁন্দ আলী বিশ্বাস এবং ওকালতনামা দেওয়া কাদের আলীর বিরুদ্ধে এ মামলা করতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে আসামি পক্ষের আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমানকে মামলার তদন্তে সহযোগিতা করতে বলেছে আদালত।

জাল নথির ভিত্তিতে দেওয়া গত ১৬ সেপ্টেম্বরের আদেশ প্রত্যাহার করে উচ্চ আদালত আদেশে বলেছে, মামলার তদন্তে যদি অন্য কারও সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায় তবে তাকেও যেন আসামি করা হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে কবির বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯ (১) ধারায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর মামলা করেন বেলায়েত হোসেন।

এ মামলায় বিচার শেষে ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালের ৮ জুলাই রায় দেন।

রায়ে একমাত্র আসামি কবির বিশ্বাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এই রায় ঘোষণার সময় আসামির বয়স ছিল ৩২ বছর। এই রায়ের পর কারাবন্দি কবির বিশ্বাস হাই কোর্টে আপিল করলে আদালত তার আপিল গ্রহণ করে।

তখন তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন হেলালউদ্দিন মোল্লা। সে আপিলটি বিচারাধীন।

এ অবস্থায় কবির হোসেনের পক্ষে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে নতুন করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল করা হয়। এবার আইনজীবী হিসেবে আপিলটি দাখিল করেন শেখ আতিয়ার রহমান।

এই আপিলের সঙ্গে নিম্ন আদালতের রায়ে যে অনুলিপি দাখিল করা হয় তাতে দেখা যায়, ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ আবু আহসান হাবীব ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এক রায়ে কবির বিশ্বাসকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং আরও তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

এই রায়ে বলা হয়েছে, কবির বিশ্বাসের বয়স ৬৫ বছর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও বয়স বিবেচনায় সাজা কমিয়ে ৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত এই আপিলটি গ্রহণ করে আপিলকারী আসামির সাজা বাড়ানোর প্রশ্নে রুল জারি করে।

কবির বিশ্বাসকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

একই সঙ্গে অভিযোগ প্রমাণের পরও কবির বিশ্বাসকে সাজা কেন কম দেওয়া হয়েছে তার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বিচারক আবু আহসান হাবীবকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার বাপ্পী সাংবাদিকদের বলেন, “গত ১৬ সেপ্টেম্বর আদেশের সময় আদালতের প্রশ্ন ছিল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগ প্রমাণের পর পর আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা না দিয়ে সাজা কম দেওয়ার সুযোগ আছে কি না?

“জবাবে বলেছিলাম, সে সুযোগ নেই। আইনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে যাবজ্জীবন সাজাই দিতে হবে। অভিযোগ প্রমাণ না হলে খালাস দিতে হবে। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই বিচারকের। পরবর্তীতে যখন এই মামলার সব নথি জোগাড় করি তখন জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।”

পরে তা আদালতের নজরে আনলে সব নথি দেখে আদালত আদেশ দিয়েছে বলে জানান এই আইন কর্মকর্তা।