বিপুল এই বকেয়া বিল দ্রুত আদায়ে তৎপর হতে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ১৫ মার্চ কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার পরও এখনো কীভাবে গ্রাহকরা সংযোগ পাচ্ছেন- তা নিয়েও ওই সভায় উদ্বেগ জানান কমিটির সদস্যরা।
তারা বলেন, বন্ধ থাকার পরও সংযোগ পাওয়ার নেপথ্যে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। এসব অসাধু ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির সুপারিশ রয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।
ওই সভায় কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, আট শ্রেণির গ্রাহকের কাছে তিতাস সংযোগ লাইনের সহায়তায় গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। এসব গ্রাহক শ্রেণির কাছে মাসিক গড় গ্যাস বিক্রির পরিমাণ ১ হাজার ৪৮৭ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৯৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি সরবরাহকারী এই সংস্থার গ্রাহক পর্যায়ে বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বকেয়ার মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৭৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং বেসরকারি গ্রাহকের কাছে ৩ হাজার ৮৮২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
সংসদীয় কমিটিকে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বকেয়া আদায়ের জন্য প্রচার, লিফলেট বিতরণ, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার, নোর্টিশ প্রদান এবং বিশেষ ক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। তাছাড়া ব্যসায়িক সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমই ও সরকারি দপ্তরগুলোর সঙ্গে পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন তারা। তবে এই বক্তব্যে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারেননি সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।
ওই বৈঠকে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, “বিল যে পরিমাণ বকেয়া তা তিন থেকে চার মাসের সমপরিমাণ। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।”
জবাবে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “বিল করার পরে শিল্পের ক্ষেত্রে ৪৫ দিন, আবাসিকের ক্ষেত্রে ২১ দিন ও সিএনজির ক্ষেত্রে ২০ দিনের সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এ সময়ে অনেকে বিল পরিশোধ না করার কারণে বকেয়া বাড়ছে।”
এই কার্যবিবরণী রোববারের বৈঠক আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।
রোববার সংসদীয় কমিটির বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকের বৈঠকে আমরা শুধু একটি বিল নিয়ে আলোচনা করেছি। তিতাসের বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরবর্তীতে তিতাসের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।”
এদিকে বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য বছরে একাধিকবার পরিবর্তনের সুযোগ রেখে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধনের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিলে সায় দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
গত ২৩ জুন জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
গত ডিসেম্বরে বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়।
বিলে বলা হয়েছে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে কমিশনের একক বা পৃথক পৃথক আদেশ দ্বারা, প্রয়োজন অনুসারে এক বা একাধিকবার পরিবর্তন করতে পারবে। এই বিধান কার্যকর হলে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বছরে এক বা একাধিকবার বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডিজেল, পেট্রলসহ জ্বালানির দাম পরিবর্তন করতে পারবে।
শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মো. আবু জাহির, আলী আজগর, নূরুল ইসলাম তালুকদার, আছলাম হোসেন সওদাগর এবং নার্গিস রহমান অংশ নেন।