‘সমালোচনায় কান না দিয়ে’ কাজ করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ‘যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয়’ দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সমালোচনায় কান না দিয়ে’ সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2020, 08:15 AM
Updated : 17 Sept 2020, 06:34 PM

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান।  

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক সমালোচনা অনেকে অনেক কিছু করে। কিন্তু আমি মনে করি যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এবং সেই সময় তাৎক্ষণিকভাবে যে কাজগুলো করার দরকার ছিল, সেটা কিন্তু যথাযথভাবে করা হয়েছে বলেই এই কোভিড-১৯ কে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।”

চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এই মহামারীর মধ্যেও যে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, আর তা করতে গিয়ে অনেকের যে মৃত্যুও হয়েছে, সে বিষয়টি সবাইকে ‘মাথায় রাখতে’ অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সমালোচকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে এক শ্রেণির লোক থাকে, তারা… সমালোচনা করাটাই অভ্যাস। পান থেকে চুন খসলে অনেক কথা বলবে, কিন্তু নিজেরা কিছু করবে না।

“আর আমি তো বেসরকারি টেলিভিশন অনেকগুলো দিয়ে দিয়েছি, তারপরে আছে বিদ্যুৎ। আর এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। এরা এক সময় সমালোচনা করেছিল, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশেই আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার তারা চালাতে থাকবে… সেটা বলুক।”

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি আমরা সঠিক পথে আছি কিনা এটা নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। সবাই যখন কাজ করবেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে করবেন। কে কী বলল, কে কী লিখল- ওর দিকে কান দিলে কোনো কাজ করতে পারবেন না। আপনার নিজের বিশ্বাস থাকতে হবে, নিজের ওপর আস্থা থাকতে হবে যে আপনি সঠিক কাজটি করছেন কিনা। যদি সেই আস্থাটা থাকে, তবে সেই কাজের ফল দেশবাসী পাবে। সেটাই আমি বলতে চাই।”

দপ্তরগুলোর সঙ্গে সরকারের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির সুফল যে শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছেই যাবে, সে কথা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের মনে করিয়ে দেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “মানুষ এর শুভফলটা পাবে। আর আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের পাশে থাকা। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা জনগণের ভোট নিয়ে এসেছি। আমরা ওয়াদাবদ্ধ মানুষের কাছে।

“আর আপনারা যারা চাকরি করেন, আপনাদের সময় আমাদের থেকে বেশি। আপনারাও কিন্তু জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ যে জনসেবা করতে হবে। জনসেবা করাটাই হচ্ছে দায়িত্ব।”

সরকারের যে সম্পদ, জনগণই যে তার মালিক, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের পাশাপাশি জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

‘দুর্নীতিমুক্ত’ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারের চেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আমরা শুদ্ধাচার কর্মপরিকল্পনা নিয়েছিলাম। এখানে আমরা দুর্নীতিমুক্ত একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।

“প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে আপনাদেরকে শুদ্ধাচার বিষয়ে নিজস্ব একটা পরিকল্পনা নিতে হবে যে কীভাবে আপনারা কাজগুলো সম্পন্ন করবেন। আপনাদের সাথে সাথে তার নিচের স্তর পর্যন্ত এই পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং তা যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। যারা এটা কার্যকর করতে পারবেন, তারাই পুরষ্কৃত হবেন।”  

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশ এটা ইজ্জতহীন দেশে পরিণত হয়েছিল। সব জায়গায় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলত। যেটা আমার খুব কষ্ট হত।”

আওয়ামী লীগের নেতৃতে গত এক দশকে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা আবার শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে বলেও অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। 

বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির ‘সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে’ জাতির পিতার আজীবন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবরা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) স্বাক্ষর করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে সেরা কর্মসম্পাদক হিসেবে স্বীকৃতিসহ ক্রেস্ট এবং প্রশংসাপত্র পায়, অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা কর্মসম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়।

এছাড়াও সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রশংসাপত্র লাভ করে।

এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর হল- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।

২০১৯-২০ অর্থবছরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে সততা প্রয়োগের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আবু হেনা মো. রহমতুল মুনিম শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৮-১৯ অর্থ বর্ষে সাফল্যের সাথে জাতীয় অখন্ডতা কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেরা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্যদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে দ্বিতীয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়কে তৃতীয় সেরা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অসামান্য কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবদের কাছে ক্রেস্ট এবং প্রশংসাপত্র হস্তান্তর করেন।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কেন্দ্রে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।