‘খিচুড়ি রান্না শিখতে নয়, ব্যবস্থাপনা দেখতে বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব’

খিচুড়ি রান্না শেখার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানো নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিষয়টি খোলাসা করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2020, 10:49 AM
Updated : 15 Sept 2020, 03:08 PM

তিনি বলছেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থাপনা দেখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

যেকোনো প্রকল্পে দেশে-বিদেশে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিধান রয়েছে জানিয়ে সচিব বলছেন, স্কুল ফিডিং পলিসির আওতায় প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণে যে ব্যয় হবে তা অপচয় নয় বরং কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা বাড়াবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ডিপিপিতে সারাদেশে মাঠ পর্যায়ের প্রায় এক হাজার কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করা হয়। এরপর ‘খিচুড়ি রান্না শিখতে এক হাজার কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে’ বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে।

সচিবালয়ে মঙ্গলবার নিজ দপ্তরে গণশিক্ষা সচিব আকরাম বলেন, “মন্ত্রিসভায় স্কুল ফিডিং পলিসি অনুমোদিত হয়েছে। এই পলিসির ভিত্তিতে ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করেছি।”

ছবিটি গত ৭ জানুয়ারির। সেদিন টু্ঙ্গিপাড়ায় স্কুল মিল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন; শিশুদের টিফিনে দেওয়া হয় খিচুড়ি। বিভিন্ন দেশে এই কার্যক্রম কীভাবে চালানো হচ্ছে তা দেখতেই কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণশিক্ষা সচিব।

১০৪ উপজেলায় চলমান প্রকল্পটির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পর্যায়ক্রমে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল চালু করা হবে। সেই নির্বাচনী ইশতেহারকে সামনে রেখে আমরা ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটা প্রকল্প প্রণয়ন করে দাখিল করেছি।”

সচিব বলেন, “এই প্রকল্পে দুটি বিষয় আছে। বাচ্চাদের আমরা দুপুর বেলা খাবার দেব। খাবারটা হবে দুই ধরনের। তিনদিন বিস্কুট এবং তিনদিন রান্না করা খাবার। বর্তমানে ছয়দিন বিস্কুট দেওয়া হয়। রান্না করা খাবারের মধ্যে খিচুড়িটি সবচেয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ।

“আর যারা এটি বাস্তবায়ন করবেন- আমাদের প্রধান শিক্ষক, কর্মকর্তা যারা মাঠ পর্যায়ে আছেন তাদের সক্ষমতার জন্য প্রত্যেকটা প্রকল্পে দেশে এবং বিদেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছি। প্রত্যেক প্রকল্পে এ ধরনের একটা কম্পোনেট থাকে। এই কম্পোনেন্টে আছে যে, এক হাজার কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দেশে যে স্কুল ফিডিং চালু আছে… যেমন আমাদের প্রতিমন্ত্রী এবং আমাদের এডিশনাল সেক্রেটারি, আমাদের যাওয়ার কথা ছিল কেরালা, দিল্লিতে।”

সচিবের ভাষ্য, কীভাবে বিভিন্ন দেশে মিড-ডে মিল চালু আছে, কীভাবে তারা ব্যবস্থাপনা করছে, সেই বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য বিদেশে কর্মকর্তারা গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে।

“খিচুড়ি কীভাবে রান্না করে- সেটার জন্য কিন্তু আমরা বিদেশে লোক পাঠাচ্ছি না। এ প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি। গতকাল পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যের সভাপতিত্বে এটার পিইসি মিটিং ছিল। মিটিংয়ে সেটির বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু কোয়ারি করেছে, সেগুলোর আমরা জবাব দেব। জবাবের পরে যদি তারা সন্তুষ্ট হয় তাহলে একনেকে উত্থাপিত হবে। একনেকে অনুমোদিত হলে জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন করতে পারব।

“সুতরাং আমরা খিচুড়ি রান্না করার জন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বিদেশি পাঠাচ্ছি না। আমরা টাকাও চাই না এটার জন্য, কোনো একটা পত্রিকা লিখেছে যে ৫-১০ কোটি টাকা চেয়েছি, নো।”

গণশিক্ষা সচিব বলেন, “এটা একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। ৬৫ হাজার ৬২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য মিড-ডে মিল চালু করতে হবে। কীভাবে ম্যানেজ করব, সেই ম্যানেজমেন্ট দেখার জন্য, যে সমস্ত উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে এই ব্যবস্থা চালু আছে সেই ব্যবস্থা দেখার জন্য এবং দেশে-বিদেশে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কম্পোনেন্ট রেখেছি সক্ষমতা অর্জনের জন্য।”

যেসব অঞ্চলের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে সেখানে ঝরে পড়ার হার তিন শতাংশের নিচে নেমেছে বলে জানান গণশিক্ষা সচিব।