এনআইডি জালিয়াতি: ‘সাঁড়াশি অভিযানের’ পরিকল্পনা ইসির

জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াত চক্রের তৎপরতা নির্মূলে দেশজুড়ে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2020, 11:56 AM
Updated : 14 Sept 2020, 11:56 AM

সোমবার এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এতথ্য জানান।

তিনি বলেন, “জালিয়াত চক্রকে আমরা সমূলে নির্মূল করব। আমাদের অবস্থান কঠোর; অপরাধীদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। সাড়াশি অভিযানের লক্ষ্যে ইসি সচিবালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এনআইডি উইং ও প্রকল্পের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে ১০টি আঞ্চলিক পযায়ে বিশেষ টিম করা হচ্ছে।”

এনআইডি উইং মহাপরিচালক জানান, এনআইডি জালিয়াত সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অপতৎপরতার তথ্য পেলে ভেতরে-বাইরে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে জেলা, উপজেলা পযায়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে। শিগগির এ সংক্রান্ত ১০টি কমিটি করে দেওয়া হবে।”

রাজধানীতে সম্প্রতি ব্যাংক ঋণ পেতে এনআইডি জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এনআইডি উইংয়ের অস্থায়ী দুজন কর্মীসহ ৫ জন এবং কুষ্টিয়ায় জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জালিয়াত চক্রের মূল হোতা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর উদ্যোগী হয়েছে এনআইডি উইং।

রোহিঙ্গাদের ভুয়া এনআইডি সংগ্রহের অপতৎপরতার মধ্যে ‘এনআইডি জালিয়াতি ও দুর্নীতি বন্ধে গেল বছর শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

এই প্রসঙ্গ টেনে সাইদুল বলেন, সম্প্রতি জালিয়াতচক্রের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া অস্থায়ী কর্মী ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এর বাইরে চক্রের অনেকে জড়িত থাকার তথ্য আসছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে মাঠ পযায়ে অনিয়ম রোধে অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

“আমরা আগেও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কাউকে রেহাই দেয়নি, প্রশ্রয় দেবও না। তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াত চক্রের বীজ ভেতর থেকে মূলোৎপাটন করা হবে। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা তদারকি বাড়াবে। সেই সঙ্গে ১০টি টিম তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে যে কোনো সময় দেশজুড়ে অভিযান করবে।”

এনআইডি উইং মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম সম্প্রতি সপরিবারে করোনাভাইরাস আক্রান্ত অবস্থায়ও অনলাইনে সার্বিক কাযক্রম দেখভাল করেছেন। সোমবার সপরিবারের করোনাভাইরাস মুক্ত হয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়ে মানুষের কাছে সেবা দ্রুত ও দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অনলাইন সেবা সফলভাবে হয়েছে। ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের বিশ্বব্যাপী সুনামের মধ্যে জালিয়াত চক্রের অপতৎপতায় তা ক্ষুন্ন হতে দেওয়া হবে না। সফল অর্জনের মধ্যে সাম্প্রতিক জালিয়াতির ঘটনায় বিব্রতর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। প্রয়োজনে পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও আলোচনা করে জালিয়াতি রোধে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে এনআইডি উইং জানিয়েছে, ইসির ডেটাবেইজ সুরক্ষিত। এখন উপজেলা পর্যায়েও সার্ভারকে ৫ স্তরের নিরাপত্তা সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে জানাতে নির্দেশনা রয়েছে।

৫১৮ জন থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, আই পিপল লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ই জোন এইচআরএম লিমিটেডের পরিচালক ও প্রোএমস এর চিফ কনসালটেন্ট কে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আইডিইএ প্রকল্পের ১১৩০ জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সারাদেশে বিভিন্ন থানা/উপজেলা/আঞ্চলিক নির্বাচন ও প্রকল্প কার্যালয়ে কর্মরত। তারা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, বিতরণ ও ভোটার রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি ও অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ করে থাকেন।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, এনআইডির তথ্য উপাত্ত বিৃকত বা নষ্ট করলে এমন অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ অর্থ দণ্ড বা উভয় দণ্ড রয়েছে।

কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারি দায়িত্বে অবহেলা করলে অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড রয়েছে আইনে।

এছাড়া ভোটার তালিকা আইনে এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২ হাজার বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।