তিন দশক পর রিকশার লাইসেন্স দিচ্ছে ডিএসসিসি

যানজট কমাতে ঢাকা থেকে পর্যায়ক্রমে দুই ও তিন চাকার অযান্ত্রিক বাহন তুলে দেওয়ার পক্ষে আগে জোরালো অবস্থান নিয়ে আসা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দীর্ঘ তিন দশক পর আবার রিকশা, ভ্যান, ঠেলা গাড়ি, টালি গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ির নিবন্ধন দিতে শুরু করেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2020, 01:09 PM
Updated : 13 Sept 2020, 01:13 PM

সেই সঙ্গে রোববার থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস রোববার নগর ভবনে এক অনুষ্ঠানে এসব যানবাহনের নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা পরিবর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, “রিকশা ঢাকা শহরের ঐতিহ্যের অংশ। রিকশাসহ ধীর গতির বাহনগুলোকে নতুন করে আমরা নিবন্ধন ও নবায়নের আওতায় আনছি।এসব যানের নিবন্ধনের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, পুরো রাজধানীতে লাইসেন্সধারী রিকশা ও রিকশাভ্যানের সংখ্যা ৭৯ হাজার ৫৫৪টি। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতেই এ সংখ্যা ৫২ হাজারের বেশি। অবশ্য বাস্তবে এই সংখ্যা বহুগুণ বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরের পর আর ঢাকায় আর কোনো রিকশা বা রিকশাভ্যানের লাইসেন্স দেওয়া হয়নি, নবায়নও বন্ধ ছিল। কিন্তু রাস্তায় নতুন রিকশা নামতে অসুবিধা হয়নি।

নিউ মার্কেট থেকে ধানমন্ডির দিকে রিকশা চলাচলের জন্য আলাদা লেইন থাকলেও তা মানছে না অনেকেই। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে অনেকের রিকশার প্রশংসা করেন। ঢাকার অলিগলিতে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া এই বাহনকে ঘিরে ঢাকায় কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।  

কিন্তু ঢাকার যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে অনেকেই রিকশাসহ ধীর গতির অযান্ত্রিক বাহনের আধিক্যের কথা বলে থাকেন। সে কারণে ধীরে ধীরে ঢাকায় রিক্শা কমিয়ে আনার পক্ষেই ছিল দুই সিটি করপোরেশন।

২০১৯ সালে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত হলে রিকশাচালকরা রাস্তায় নামেন। তাদের অবারোধ-বিক্ষোভে দুই দিন ভোগান্তি পোহাতে হয় ঢাকার বাসিন্দাদের। 

যানজট নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ সে সময় যে কমিটি করেছিল, তার প্রধান ছিলেন ঢাকা দক্ষিণের তখনকার মেয়র সাঈদ খোকন।

অলিগলি বাদ দিয়ে ঢাকার মূল সড়কগুলো থেকে ধীরে ধীরে রিকশা তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে সে সময় তিনি বলেছিলেন, “ঢাকার শহরের বর্তমান যা অবস্থা আমরা যদি ধীরে এই অবস্থার পরিবর্তন না করি, একটা শহর তো থমকে থাকতে পারে না। আমরা জানি যে এই ধরনের উদ্যোগে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসবে কিন্তু আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে আমরা আমাদের কাজগুলো আমরা করব।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও সে সময় তিন সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থান নিয়েছিল।

তবে পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের বৈঠকে মহাসড়কে ধীর গতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেইন করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর এলে আন্দোলন স্থগিত করে রিকশ্যা-ভ্যান শ্রমিকরা।

রোববারের অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ইতোমধ্যে ডিএসসিসি এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহনের ‘কার্যকারিতা নিরূপণের কাজ’ শুরু হয়েছে। অনিবন্ধিত কোনো যানবাহনকে ঢাকায় চলতে দেওয়া হবে না।

“কোন সড়কে ধীর গতির যানবাহন চলবে, কোন সড়কে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করবে, এগুলো আমরা নির্ণয় করব। এই নিবন্ধন কার্যক্রমের মাধ্যমে ধীর গতির যানবাহনগুলো যেমনি নিবন্ধনের আওতায় আসবে, তেমনি নিয়মের আওতায়ও আসবে।”

তিনি বলেন, “নিবন্ধনের আওতায় এনে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে তাদের সড়ক নির্ধারণ করে দেব এবং চালকদেরকেও আমরা নিবন্ধনের আওতায় আনব। ফলে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো শৃঙ্খলার আওতায় আসবে।”

অযান্ত্রিক বাহন নিবন্ধনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকায় গত তিন দশক ধরে রিকশা ও অযান্ত্রিক বাহনের কোনো নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। কিন্তু এগুলোর চলাচল বন্ধ হয়নি।

“বাস্তবতা হল, ঢাকায় রিকশা চলে এবং সেগুলো সবই অবৈধভাবে চলে। আর নিবন্ধনের আওতায় আনা মানে অযান্ত্রিক যানবাহনকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক রিকশা-ভ্যানসহ অযান্ত্রিক বাহনকে নিবন্ধন দেব।”

রাস্তার উপরে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে রিকশা। ছবিটি তেজগাঁও এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি ডিএসসিসি এলাকার অযান্ত্রিক যানবাহনের নিবন্ধন, নবায়ন, মালিকানা পরিবর্তনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, আগ্রহীদের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নগর ভবনের ভাণ্ডার ও ক্রয় বিভাগ এবং আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর দপ্তর থেকে অফিস সময়ে ১০০ টাকার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। যাচাই-বাছাই করে যোগ্য বিবেচিত হওয়া আবেদনগুলোর অনুকূলে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে।

তবে নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা বদলের ফি এখনও ঠিক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকতা আরিফুল হক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ফি নির্ধারণে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তারা কাজ করছেন। আমরা একটি আধুনিক প্লেট লাগাতে চাচ্ছি। এটি এমন হবে যেন মোবাইলে ট্র্যাক করে কেউ বুঝতে পারেন বাহনটি বৈধ না অবৈধ।”

আরও পড়ুন: