ওই ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ পর শুক্রবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের সামনের সড়ক পুরোটাই কাটা। গর্তে জমে আছে পানি। মসজিদের উল্টোপাশে সড়কের এক পাশ দিয়ে কোনোমতে যাতায়াত করছেন লোকজন। মসজিদের প্রধান সড়ক থেকে কয়েক ফুট দূরে সড়কের কেটে ফেলা অংশে জমে থাকা পানি ও কাদা ঠেলে গ্যাস বের হচ্ছে। কিছুটা কাছে গেলেই গ্যাসের বুদবুদ দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাদাপানি ঠেলে গ্যাস বের হওয়ার ঘটনাটি তারা সকাল থেকেই দেখেছেন। তবে বিকাল ৫টার দিকে সেখানে আর গ্যাসের বুদবুদ দেখা যায়নি।
মসজিদের পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, সকাল থেকেই গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি লক্ষ করেছেন তিনি।
“যেখানে পানি আছে সেখানে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি বোঝা যায়। কিন্তু অনেক জায়গায় শুধু কাদা-মাটি। সেখানে তো গ্যাস বের হলেও বোঝা যাবে না।”
“আমরা দেখতে এসেছি। মসজিদ দেখে এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি গ্যাস বের হচ্ছে। আমরা বিষয়টি আরও কয়েকজনকে দেখিয়েছি। গ্যাস বেশ প্রেসারেই বের হচ্ছিল। তবে বিকালের দিকে লাইনের চাপ কমে গেলে বুদবুদটা আর দেখা যায়নি।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মফিজুল ইসলাম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্যাসের লাইনে ছিদ্র থেকে গ্যাস বের হতে পারে। তবে ছিদ্র হলে তা থেকে অনবরত গ্যাস বের হওয়ার কথা।
“ঘটনাস্থলে আমাদের জরুরি টিম পাঠানো হয়েছে, তারা বিষয়টি দেখছে। পাইপলাইনে আরও ছিদ্র আছে কি না তা দেখার জন্যই আমরা গর্তগুলো ভরাট করিনি। পাইপে ছিদ্র থাকলে তা বন্ধে শনিবার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ চলাকালে বিকট শব্দে বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষ দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে এক শিশু, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ অন্তত ৩১ জন এরইমধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাকিদের অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে গেছে। জানালার কাচ বিস্ফোরণে উড়ে গেছে।
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ও গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।
এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে গত সোমবার ওই মসজিদের পূর্ব ও উত্তর পাশের সড়ক খনন করে তিতাসের কর্মীরা। মসজিদের পূর্ব পাশের সড়কে কোনো ছিদ্র না পেলেও উত্তর পাশের পুরো সড়কের পাইপে ছয়টি ছিদ্র পাওয়ার কথা জানান তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা। সেসব ছিদ্র মেরামত করে গ্যাসের সংযোগ চালু করা হয়। এরপরেও সেখান থেকে গ্যাস বের হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।
“মাত্র গ্যাসের লিকেজের কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল। এখনও এই লাইন থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। এ রকম হলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হবে,” বলেন হাফিজুর নামে মসজিদের পাশের ওই বাসিন্দা।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি]