কপিরাইট অফিসের রায় চ্যালেঞ্জ করে লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো.আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও এ বি এম হামিদুল মিসবাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম।
‘এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায়’ কপিরাইট অফিসের ওই রায় কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
সংস্কৃতি সচিব, কপিরাইট অফিস, রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস এবং কপিরাইট বোর্ডকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কপিরাইট লঙ্ঘনের কোনো আবেদন শোনার এখতিয়ার কপিরাইট অফিসের নাই। কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগের আবেদন শুনবেন জেলা জজ অথবা দায়রা জজ।”
কপিরাইট অফিস গত ১৪ জুন এক সিদ্ধান্তে জানায়, ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিমই ওই বইগুলোর স্বত্বাধিকারী।
অধিকাংশ বইয়ের মালিকানা হারালেও ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের স্রষ্টা হিসেবে চরিত্রটি কাজী আনোয়ার হোসেনের মালিকানায় থাকছে বলে কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী সে সময় জানান।
আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ বলেন, “যেহেতু কপিরাইট অফিস এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে এ রায় দিয়েছে, সেটি চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করা হয়েছিল। শুনানি শেষে হাই কোর্ট এক মাসের জন্য ওই রায় স্থগিত করে রুল জারি করেছেন।”
হোই কোর্টের এ আদেশের ফলে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের প্রকাশনা ও মালিকানা স্বত্ব আপাতত সেবা প্রকাশনীরই থাকছে বলে জানান আইনজীবী মিসবাহ।
তিনি বলেন, “এসব বইয়ের প্রকাশ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম গ্রহণ করতেও সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের কোনো বাধা থাকছে না।”
অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের ছেলে কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৬ সালে সেবা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ লেখা শুরু করেন; দ্রুতই তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
পরবর্তীকালে কাজী আনোয়ার হোসেন পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্যদের দিয়ে ‘মাসুদ রানা’ লেখাতেন। তার মধ্যে শেখ আবদুল হাকিমও রয়েছেন।
তবে ‘বাজারজাত করার স্বার্থে’ অন্যদের লেখাগুলো কাজী আনোয়ার হোসেন নিজের নামে প্রকাশ করতেন।
শুরুতে কোনো আপত্তি না থাকলেও ২০১০ সালে মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি বইয়ের মালিকানাস্বত্ব দাবি কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন শেখ আবদুল হাকিম।
নয় বছরেও অভিযোগের কোনো সুরাহা না পাওয়ায় গত বছর ২৯ জুলাই তিনি কপিরাইট অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
তিন দফা শুনানি, দুই পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও তৃতীয় পক্ষের বক্তব্যের আলোকে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় কপিরাইট অফিস। এর ভিত্তিতে ওই বইগুলোর মালিকানা আবদুল হাকিমকে দেওয়া হয়।