সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি একটি কথা বলব, আমাদের পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলার জন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, দেশে এই ঘটনাটি কোনোভাবেই তাদের ভূমিকাকে ম্লান করবে না।”
গত ৩১ জুলাই কক্সবাজারের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য তিনি কক্সবাজারে গিয়েছিলেন দুই সঙ্গীকে নিয়ে।
কক্সবাজারের পুলিশ সে সময় বলেছিল, রাশেদ তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।
সিনহার বোন আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করলে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে অত্মসমর্পণ করেন। তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে গণশুনানি করে প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি লিয়াকত-প্রদীপসহ পুলিশ সদস্যদের জবানবন্দিও নিয়েছে।
সব মিলিয়ে ৬৮ জনের বক্তব্য শুনে যে প্রতিবেদন তারা তৈরি করেছেন তার আকার দাঁড়িয়েছে ৮০ পৃষ্ঠা। তার সাথে ফটো অ্যালবাম আছে, বিভিন্ন চিঠিপত্র ও কাগজপত্র যুক্ত করে প্রায় ৬০০ পৃষ্টার প্রতিবেদন সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান।
এক মাসের বেশি সময় তদন্ত করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে মিজানুর বলেন, “আমরা একটা কর্মপরিকল্পনা করি। আমি সংযুক্তিতে দিয়েছি আমরা ৩ তারিখ থেকে আজকে পর্যন্ত কী কী করেছি। আমরা বিস্তারিত ক্যালেন্ডারের মতো করেছিলাম, সেটি সংযুক্তিতে আছে।”
মন্ত্রণালয় যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছিল, অর্থাৎ ঘটনার উৎস, কারণ এবং এ ধরনের ঘটনার প্রতিকারের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে সুপারিশ দেওয়া বলে জানান তিনি।
“আমরা রাতে এপিবিএনের ফোর্স নিয়ে ডেমো করেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি। যে পাহাড়ে মেজর সিনহা গিয়েছেন সেই পাহাড়ে গিয়েছি। ওখানকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে উৎস, কারণ ও আমাদের সুপারিশ প্রণয়ন করেছি।”
তদন্ত প্রতিবেদনে কয়টি সুপারিশ করা হয়েছে, সেই প্রশ্নে মিজানুর বলেন, “আমি তো হস্তান্তর করে দিয়েছি এখন স্যারদের ব্যাপার। আমার তরফ থেকে আর কোনো বক্তব্য নেই।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে এসেছে। রিপোর্টে কি আছে আমরা এখনও দেখিনি। ...আমাদের সচিব মহোদয় এগুলো বিশ্লেষণ করে যেখানে যেটা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী কাজ করবেন।”
মন্ত্রী বলেন, “আপনারা নিশ্চয় জানেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এটার পুলিশি তদন্ত চলছে। সে কারণে আমরা প্রকাশ্যে কিছু জানাতে পারব না। আমরা আদালতকে এটার সম্পর্কে জানিয়ে দেব, আদালত মনে করলে এটাকে আমাদের কাছ থেকে অফিসিয়ালি নিয়ে যাবেন। আদালত তদন্তের জন্য হয়ত এটা নিয়েও নিয়ে পারেন... এটা আদালতের এখতিয়ার।”
তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের নামে অভিযোগ আসবে’ তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলে আশ্বাস দেন কামাল।