‘চুরির ঘটনা নয়, ইউএনওর উপর পরিকল্পিত হামলা’

চুরি করতে গিয়ে দেখে ফেলায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলা হয়েছে, এমন কথা মানতে নারাজ সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2020, 09:46 AM
Updated : 5 Sept 2020, 11:11 AM

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ইউএনও ওয়াহিদার ঘরে হামলাটি ছিল পরিকল্পিত।

সারাদশে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগের দাবিও তুলেছেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমেদ।

গত বুধবার রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর উপর হামলা চালানো হয়। গুরুতর জখম ওয়াহিদা এখন ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন।

যুবলীগের স্থানীয় এক নেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার র‌্যাব জানায়, চুরির উদ্দেশ্যে ওয়াহিদা বাড়িতে ঢুকে ওই হামলায় আসাদুল হক নামে একজন, তার সহযোগী ছিলেন নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার বিশ্বাস নামে বাকি দুজন।

সংবাদ সম্মেলনে হেলালুদ্দীন বলেন, “কোনো কোনো মহল ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

“অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এটি কোনো চুরির ঘটনা নয়। কারণ দুর্বৃত্তরা কোনো প্রকার জিনিস চুরি করেন বা খোয়া যায়নি। এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণের ঘটনা এবং এর সাথে আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে।”

ওয়াহিদাকে ‘সৎ ও নির্ভীক কর্মকর্তা’ অভিহিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, “বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল বেআইনি তদবিরে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।”

সংগঠনের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, “আমরা দেখেছি, ইউএনও ওয়াহিদা ইদানিংকালে কিছু উচ্ছেদ করেছেন। আরও কিছু উচ্ছেদ করার জন্য কিছু লোকজন তার উপর সংক্ষুব্ধ হয়েছেন।

“ওখানে যে বালুমহালে অবৈধভাবে বালু তুলতে সে বাধা দিয়েছিল। এ সমস্ত কারণে প্রভাবশালী কেউ হয়ত তার উপর ক্ষিপ্ত হতে পারেন। সেটির বহিঃপ্রকাশ এভাবে হতে পারে বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটি তদন্ত করছে, সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে উদ্দেশ্য করে আমরা কিছু বলতে পারছি না। তদন্ত কার্ন্ক্রম যখন চলে, তখন যদি আমরা সুনির্দিষ্টভাবে আমরা কথা বলি, তাহলে কিন্তু তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।”

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, “উপজেলাতে বিভিন্ন পেশা ও সংগঠনের লোকজন থাকেন। মানুষের চাহিদা অফুরন্ত হয়ে গেছে। সে চাহিদার মধ্যে কোনটা আইনি, কোনটা বেআইনি, এটা কিন্তু তারা অনেক সময় বাছবিচার করে না।

“আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের যে কর্মকর্তা, ইউএনও সাহেব, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে থাকেন। মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি বিষয় উনি দেখভাল করে থাকেন, যেন কোথাও আইনের ব্যত্যয় না হয়। কোথাও আইনের ব্যত্যয় করে যদি কিছু আবদার করা হয়, তখন অনেকে (ইউএনও) তাদের বিরাগভাজন হন।”

ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় আটকদের রাজনৈতিক পরিচয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলেও ‘তদন্তের স্বার্থে’ এ নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন না অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ হারুন বলেন, এই দুর্বৃত্তদের কেউ রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে।

“আমরা দেখেছি, যে সমস্ত লোকজন এই দুর্বৃত্তায়ন করে, তাদের যে সবসময় রাজনৈতিক প্রভাব থাকে এরকম না। অন্য জায়গা থেকে এসেছে … অন্য দল থেকে এসেছে .. তারাও কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরকম রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে এ সমস্ত কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে। সব রাজনীতিবিদ যে খারাপ এরকম নয়। সব দুর্বৃত্তরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য, এটি আমরা মনে করি না।”

ওয়াহিদা খানম

হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, “ওয়াহিদা খানম তেমন কোনো চাপে ছিলেন বা অস্বস্তিতে আছেন বলে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে শেয়ার করেননি।”

বাংলাদেশ অ্যাডমিনস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা তদন্তকারী দলগুলোকে নিজেদের মতামত ও পর্যবেক্ষণ জানাবে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসকদের নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তবে তাদের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ান আনসার নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে হেলালুদ্দীন বলেন, “সব জেলাতে ব্যাটালিয়ান আনসার নেই। যেসব জেলাতে আছে, আমরা সেখানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসকদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ দেওয়ার জন্য আবেদন জানাব।”

সংবাদ সম্মেলনে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুনের মামলার প্রসঙ্গটি উঠে আসে।

হেলালুদ্দীন বলেন, “আপনারা শুনেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের বিরুদ্ধে কতিপয় অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির প্ররোচনায় ফৌজদারি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিআইবির নিকট প্রেরণ করেছেন।

“অসংলগ্ন কথাবার্তায় ভর্তি এরকম একটি আর্জির ভিত্তিতে একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা নজিরবিহীন এবং দুর্ভাগ্যজনক। যদি মামলা গ্রহণ করা হয়, তাহলে জেলা প্রশাসন কী করে তার দায়িত্ব পালন করবে? আমরা অবিলম্বে এ মামলাটি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারসহ যিনি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”