ভারতে চিকিৎসা প্রার্থীদের ভোগান্তি

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি রোগীরা।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2020, 11:49 AM
Updated : 2 Sept 2020, 12:00 PM

ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন ‘জরুরি বিবেচনায়’ কিছু ভিসা ইস্যু করলেও লকডাউন পরিস্থিতিতে যাতায়াতের বিষয়টি কপালে ভাঁজ ফেলছে চিকিৎসা প্রত্যাশীদের।

এর বাইরে যাদের আগে পাওয়া মেডিকেল ভিসার মেয়াদ আছে, তাদেরকেও ইমেইলের মাধ্যমে ভারতে যাওয়ার বিশেষ অনুমতি নিতে হচ্ছে।

লকডাউনের আগে থেকে মুম্বাইয়ে একজন চিকিৎসকের অধীনে বোনের ক্যান্সারের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ইমরান হোসেন।

দুই মাস অন্তর নেওয়া তার থেরাপি সেশনের সর্বশেষটি হয় ফেব্রুয়ারিতে; এরপর এপ্রিলে পরবর্তী থেরাপি নেওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে ভারতের সব ভিসা স্থগিত হয়ে যায় মার্চের মাঝামাঝিতে।

হাই কমিশনে আবেদন করে বিশেষ ব্যবস্থায় ভিসা নিলেও সেটির স্বল্প মেয়াদ এবং যাওয়ার পথের ঝক্বি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন ইমরান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিসা পেয়েছি। কিন্তু মেয়াদ মাত্র তিন মাস এবং সিঙ্গেল এন্ট্রি। আগে যেখানে এক বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা ছিল।

“একটা থেরাপি সেশন হলে আরেকটার জন্য সেখানেই দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে। আর ফিরে আসলে আবার ভিসা নিতে গেলে আবার জটিলতা। সব মিলিয়ে কী হবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”

বেনাপোল পর্যন্ত স্থলপথে যাওয়ার পর কলকাতা থেকে বিমানে মুম্বাই যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান ইমরান।

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আমাদের ইমিগ্রেশন পার হওয়া যাবে। কিন্তু তারপর কী হবে এখনো জানি না। বর্ডার পর পার হয়ে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে নাকি মুম্বাইয়ে গিয়ে, সেটা এখনো নিশ্চিত না।”

জরুরি বিবেচনায় ইমরান তার বোনের চিকিৎসার জন্য ভিসার ব্যবস্থা করতে পারলেও স্ত্রী রোগে ভোগা আরোহী আরিয়া তা পারেননি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বন্ধ্যাত্বসহ নানা জটিলতা নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসা বন্ধ।

“গত ২০ দিনে হাই কমিশনের নির্দিষ্ট ঠিকানায় চার বার ই-মেইল করেও কোনো রিপ্লাই পাইনি। তা আর পাব কি-না, জানি না।”

ভারত ভিসা ব্যবস্থা সহজ করার পর গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশিদের সফরের প্রবণতা বাড়ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এবার তাতে বড় ছেদ পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মহামারীর মধ্যে ১৩ মার্চ রাত ১২টা থেকে কূটনৈতিক, অফিসিয়াল, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, চাকরি ও প্রকল্প ভিসাসহ সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছিল ভারত সরকার।

কয়েক দফা বাড়ানোর ধারাবাহিকতায় যাত্রীবাহী আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে প্রতিবেশী দেশটি।

এদিকে লকডাউন পরিস্থিতির কারণে ভারতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে থাকা অনেকে ওষুধের সংকটেও ভুগছেন। অনলাইনসহ নানাভাবে ওষুধ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কেউ কেউ।

ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের একজন মুখপাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিসা পেতে হলে প্রথমে ভারতে কোনো হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের অ্যাপয়েনমেন্ট লাগবে। সেটার ভিত্তিতে হাই কমিশনের নির্দিষ্ট ই-মেইলে আবেদন করতে হবে।

“জরুরি বিবেচনায় হাই কমিশন থেকে ফিরতি ইমেইলে ভিসা সেন্টারে আসতে বলা হচ্ছে। সেই আলোকে কাগজপত্র নিয়ে আসলে ভিসা প্রসেস হবে।”

কেবল জরুরি ও বিশেষ ক্ষেত্র বিবেচনায় মেডিকেল ভিসা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যে কোনো অসুস্থতার জন্য এই পরিস্থিতিতে ভিসা দেওয়া সম্ভব না, তাই কেইস বাই কেইস দেওয়া হচ্ছে।”

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে চিকিৎসা, ব্যবসা, বেড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেন, যাদের ১০ শতাংশের বেশি যান চিকিৎসা নিতে।

ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া বিদেশিদের ৪৫ শতাংশই যান বাংলাদেশ থেকে।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার ২৮২ বিদেশি ভারত ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৭৬ হাজার।

চিকিৎসাপ্রার্থী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়দের বিড়ম্বনার কথা বিবেচনায় নিয়ে আকাশপথে বিশেষ যাতায়াত ব্যবস্থা তৈরির প্রস্তাব ঢাকা সফরে দিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

এই ‘এয়ার ট্রাভেল বাবল’ তৈরিতে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে হাই কমিশনের মুখপাত্র বলেন, “দুই সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। আশা করি, শিগগিরই কিছু একটা হবে।”

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির পাশাপাশি প্রতিবেশীদের মধ্যে মালদ্বীপের সঙ্গে ইতোমধ্যে ‘এয়ার ট্রাভেল বাবল’ তৈরি করেছে ভারত।