সমীক্ষা ছাড়া ডিটিসিএতে কোনো কাজ দেখেন না কাদের

রাজধানীতে সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আট বছর আগে জন্ম নেয়া ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-ডিটিসিএ আশানুরূপ কাজ করতে পারায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2020, 10:10 AM
Updated : 1 Sept 2020, 10:59 AM

‘সমীক্ষা আর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যে ঘুরপাক’ খেতে থাকা ডিটিসিএতে কোনো কাজ হতে দেখেন না তিনি।

মঙ্গলবার ডিটিসিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের দায়িত্বে থাকা এই কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরেন মন্ত্রী।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “বলতে গেলে এ নগরীতে ফুটপাতই নেই। পথচারীদের হাঁটার জন্য যে ফুটপাত, সেটা বেদখলে। ঢাকা সিটি কলেজ হতে সাত মসজিদ রোড হয়ে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর মোড় পর্যন্ত পথচারীবান্ধব ফুটপাত নির্মাণের উদ্যোগটিও এখনও সমীক্ষা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ।

“কবে শেষ হবে সমীক্ষা, কখন প্রকল্প নেয়া হবে আর কখন কাজ হবে, জানি না। ডিটিসিএ শুধু সমীক্ষা আর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যে ঘুরপাক খায়। যে কাজই দেয়া হয়, শুধু সমীক্ষা আর সমীক্ষা, কাজ হতে দেখি না।”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, “র‌্যাপিড পাস আর ক্লিয়ারিং হাউসের কাজের দ্বিতীয় পর্যায়ও একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। র‌্যাপিড পাস উদ্বোধন করেছিলাম, কিন্তু কার্যকারিতা দেখছি না। তখন তো  বলা হয়েছিল সবাই এ কার্ড ব্যবহার করবে। তাহলে এখন করছে না কেন? নিশ্চয়ই আপনাদের পরিকল্পনা জনবান্ধব ও যাত্রীবান্ধব ছিল না, যতটা প্রত্যাশা ছিল।

“ঢাকা মহানগরীর যানজট ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। দীর্ঘদিন থেকে ডিটিসিএ কাজ করছে রুট রেশনালাইজেশনের জন্য। বাসগুলোকে কোম্পানিতে রূপান্তরের মাধ্যমে পরিচালনা করার প্রথম আলোচনা শুরু হয় মরহুম মেয়র আনিসুল হকের সময়। এরপর দায়িত্ব দেয়া হয় সাঈদ খোকন সাহেবকে। কিন্তু কতদূর এগোলো নগরবাসি তো এখনও কিছু দেখতে পেল না। কয়টি সভা হল, সেটা বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে উদ্যোগটাকে দৃশ্যমান করা।”

কাদের আরও বলেন, “বোর্ড সভায় নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের জন্য পরিবহন মাস্টারপ্ল্যান করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেটাও এখন পর্যন্ত ডিপিইসি সভায় আটকে আছে। চট্টগ্রামের পরিবহন মাস্টারপ্ল্যানেও বলার মত কোনো অগ্রগতি নেই, একটি কাজ শুরু করলেন, কিন্তু শেষ করতে না পারলে এর সফলতা কোথায়? চট্টগ্রাম মেট্রোরেল চালুর বিষয়ে অর্থায়নকারী সংস্থা নির্বাচনে ইআরডির প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি। এ কাজটি আমাদের দ্রুত এগিয়ে নেয়া দরকার।”

বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ঢাকা মহানগরীতে চলছে মেট্রোরেলের কাজ, শহরের প্রধান সড়কটি একাংশ জুড়ে ছোটট হয়ে এসেছে। তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ দক্ষতার সাথেই ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করছে। পাশাপাশি চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। ওইদিকে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত চলছে বিআরটির কাজ। এখন যদি এয়ারপোর্ট হতে সদরঘাট পর্যন্ত বিআরটির অপর অংশের কাজ হয় এ শহর অচল হয়ে পড়বে। শহরের প্রধান আর্টারি সংকুচিত হলে জনভোগান্তি বাড়বে। নির্মাণকালে স্থবির হয়ে পড়বে পুরো করিডোর।

“এসব বিষয়ে টেবিলে বসে ভাবলে হবে না। চারটি প্রকল্প আপনারা বাস্তবায়ন করছেন, আমি প্রতিবেদনে দেখলাম একটির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আরেকটির একবছর বাড়ানো হয়েছে, তৃতীয়টি ২০১৯ সালে অনুমোদনের পর মাত্র পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, চতুর্থটিতে বলা হয়েছে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। সবগুলোতে করোনাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে।

“এ কাজগুলোর অধিকাংশে টেবিল ওয়ার্ক। মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য দপ্তর করোনাকালে যেখানে ফিল্ড লেভেলে ফিজিক্যাল ওয়ার্ক করছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, আপনারা সেখানে করোনার উপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছেন। আসলে সবকিছুর মূলে সদিচ্ছা। সচিব মহোদয়  এবং ইডি সাহেবকে বলব, দক্ষ, উদ্যমী কর্মকর্তা নিয়ে আসুন। বছরের পর বছর একই স্থানে অনেকে বসে আছেন, তাদের আউটপুট মূল্যায়ন করুন। গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় একটি সফল উদাহরণ আপনারা আমাকে দেখান।”

তিনি বলেন, “আইন পাশ করে ডিটিসিএর আইনগত ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেটি কাজে লাগানো হচ্ছে কীনা আপনারাই ভালো জানেন। বহুতল ভবনের ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স পেতেও ভোগান্তি আছে বলে আমার কাছে অভিযোগ আছে। এ সকল সভা আপনারা নিয়মিত করবেন। মানুষের ভোগান্তি যেন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।”