সালমান শাহর মৃত্যু: প্রতিবেদনে নারাজি দিতে সময় পেলেন মা

চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর কারণ ‘আত্মহত্যা’ বলে যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পিবিআই দিয়েছে, তাতে আপত্তি জানিয়ে ‘নারাজি’ আবেদন করতে সময় পেয়েছেন তার মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরী।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2020, 12:05 PM
Updated : 6 Sept 2021, 05:50 AM

তার আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, নারাজি আবেদন জমা দিতে মামলার বাদী নীলা চৌধুরীর পক্ষ থেকে সময়ের আবেদন করেছিলেন তিনি। ঢাকার মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভুঁইয়া সে আবেদন মঞ্জুর করে ১১ অক্টোবর মামলার পরবর্তী তারিখ রেখেছেন।

ফারুক আহম্মেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সালমান শাহর মা লন্ডনে আছেন। করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে তিনি দেশে আসতে পারছেন না। তাই নারাজি দেওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন জানিয়ে তারা আবেদন করেছিলেন।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালে সালমান শাহর মৃত্যু গত দুই যুগ ধরে রহস্য হয়েই ছিল।

প্রথমে সিআইডি এবং পরে বিচার বিভাগীয় তদন্তে সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলা হলেও তা মানতে নারাজ সালমান শাহর পরিবার; হত্যার অভিযোগ তুলে তাতেই অটল রয়েছেন তারা।

তাদের আবেদনে আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়, সেখানেও আত্মহত্যার কথাই বলা হয়।

ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ৬০০ পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ‘দেখিলাম’লিখে স্বাক্ষর করেন এবং আমলে নেওয়ার জন্য পরবর্তী তারিখ রাখেন। কিন্তু মহামারীর মধ্যে পরে তা পিছিয়ে যায়।

ওই তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়ে নীলা চৌধুরীর আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, “যেখানে তুলির আঁচড় কাটা উচিৎ ছিল আতশি কাচে পর্বেক্ষণের পর, সেখানে কোদাল চালানো হয়েছে। পিবিআই  সালমান শাহর হত্যার কারণ খুঁজতে  যথাযথ আলোকসম্পাত করেনি।  কিন্তু আমরা বিষয়টির শেষ দেখে ছাড়ব।”

পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। তখন একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি।

তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেন।

সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত।

দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।

সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

মামলাটি এরপর তদন্ত করে র‌্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র‌্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন।

তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার বছর তদন্তের পর গত ফেব্রুয়ারিতে তারা প্রতিবেদন দেয়। সেখানেও বলা হয়, ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।