ঢাকার দুই হাসপাতালে ‘পোস্ট কোভিড ক্লিনিক’

কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পরও যারা বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন, তাদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য বিশেষ ক্লিনিক চালু করেছে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2020, 06:35 AM
Updated : 31 August 2020, 07:55 AM

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ‘পোস্ট কোভিড ফলোআপ ক্লিনিক’ গত শনিবার থেকেই কার্যক্রম শুরু করেছে। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘পোস্ট কোভিড ক্লিনিক’ চালু হয়েছে গত মঙ্গলবার।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন এ ধরনের ব্যক্তিদের এ ক্লিনিকে সেবা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএসএমএমইউ এবং ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।

বিএসএমএমইউ জানিয়েছে, প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ইন্টার্নাল মেডিসিন বহির্বিভাগে এই ক্লিনিকের সেবা দেওয়া হবে। আউটডোর থেকে ত্রিশ টাকার টিকিট কিনে সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যাবে।

এ ক্লিনিকে আসার পর প্রয়োজনে অতি বিশেষায়িত সেবার জন্য পালমোনলজি, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, নিউরোলজি, সাইকিয়াট্রি, ফিজিক্যাল মেডিসিনসহ অন্যান্য বিভাগের পরামর্শের জন্য স্থানান্তর করা হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিকিৎসায় করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হলেও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা কিছুটা থেকে যায়।

“কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করতে পারেন। তার শরীরে জীবাণু না থাকায় অন্যরা তখন আর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। কিন্তু অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কারণে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট পেতে পারেন।

“হৃদরোগ, ইউরোলজি, স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা এ সময় দেখা দিতে পারে। তার মানে করোনা নেগেটিভ হলেও তিনি যে শতভাগ ভালো হয়ে গেলেন, তা কিন্তু না। অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছু কিছু থেকে যেতে পারে। তখন ওই রোগীর কী হবে? সেই চিন্তা থেকেই আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি।”

ডা. জুলফিকার জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস ইউনিটে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর ফিভার ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।

বিএসএমএমইউ জানিয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ৫ বছর ধরে ফলোআপের প্রয়োজন হতে পারে। সেজন্য বড় পরিসরে জায়গা প্রয়োজন। আপাতত মেডিসিন বহির্বিভাগে ‘পোস্ট কোভিড ফলোআপ ক্লিনিক’ চালু হলেও পরবর্তীতে তা অন্তঃবিভাগ বা বহির্বিভাগের কোথাও স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হবে।

এই ফলোআপের অংশ হিসেবে রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিএসএমএমইউতে করা যাবে। তবে সেজন্য আলাদা ফি দিতে হবে।

‘পোস্ট কোভিড ফলোআপ ক্লিনিক’ পরিচালনায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ইমপেরিয়াল কলেজ-লন্ডন কারিগরী সহায়তা দিচ্ছে। ক্লিনিকটি কোভিড-১৯ গ্লোবাল ফলোআপ কনসোর্টিয়ামের একটি অংশ বলেও জানিয়েছে বিএসএমএমইউ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, হাসপাতাল-২ এর পঞ্চম তলায় তাদের ‘পোস্ট কোভিড ক্লিনিক’ এর কার্যক্রম চলছে।

প্রতি সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার বেলা ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সেখানে রোগী দেখা হবে। আউটডোর থেকে ১০ টাকার টিকিট কিনে এই ক্লিনিকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিরা।

আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে হাসপাতাল থেকেই সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে তা করাতে পারবেন। দরিদ্র রোগীর জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ডা. নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার পর যারা বাড়ি যাচ্ছেন, তারা আবার নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ছেন। কিছু সমস্যা নতুন করে দেখা যাচ্ছে।

“এজন্য তারা কষ্টের মধ্যে থাকেন। এসব চিন্তা করেই আমরা এই ক্লিনিকটি চালু করেছি। এখন আপাতত আমরা দুদিন রোগীদের চিকিৎসা দেব। যদি দেখি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাহলে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয়ও রোগী দেখার ব্যবস্থা করব।”