বাংলাদেশে চীনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি

চীনের তৈরি করা করোনাভাইরাসের একটি টিকা বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2020, 10:18 AM
Updated : 28 August 2020, 02:29 PM

সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেডের তৈরি ওই টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশে করার অনুমতির বিষয়টি বেশ কিছুদিন ঝুলে থাকার পর বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ঘোষণা এল।

তিনি বলেন, “চায়নার সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাদের সিনোভ্যাক কোম্পানি বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেবে। বাংলাদেশে তারা কিছু পরীক্ষাও করতে চায়, ট্রায়াল করতে চায়। সেই বিষয়ে আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছি। ভ্যাকসিনের সমস্ত বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি “

ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের টিকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী চিন্তা-ভাবনা করে আমাদের একটা নির্দেশনা দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা যেহেতু চাই দেশে ভ্যাকসিন আসুক, তাহলে তার তো ট্রায়াল লাগবেই। সেই ট্রায়ালটা কাদের উপরে করব? প্রপোজাল হল ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ওপর আগে (ট্রায়াল) করা হবে।”

“আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ট্রায়াল করতে দেব। যারা স্বেচ্ছায় আসবে, তাদের ওপরই শুধু ট্রায়াল হবে। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত এবং সিনোভ্যাক কোম্পানিকেও আমরা এ কথা জানিয়ে দিয়েছি।”

কোনো টিকার চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে বিপুল সংখ্যক মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে তার ফলাফল দেখতে হয়। পরীক্ষায় নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হলেই সেই টিকা অনুমোদন পায়।

চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাসের টিকা এখন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।

এর মধ্যে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড তাদের তৈরি করা টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশেও করার পরিকল্পনা করে। গত ১৮ জুলাই এই টিকা বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদনও দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল, বিএমআরসি।

ঘোষণা অনুযায়ী, এই টিকার বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কাজটি করবে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বি। আগামী ১৮ মাস ধরে দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা রয়েছে।

এদিকে ভারতে তৈরি সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্যও বাংলাদেশ ‘প্রস্তুত’ বলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এর আগে জানিয়েছেন।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা টিকার পরীক্ষা ও উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটি অফ ইন্ডিয়া (এসআইই)।

দ্বিতীয় ধাপ থেকেই কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে যাচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী এই সংস্থা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “চীনের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে তাদের যে কর্মীরা রয়েছে এবং দূতাবাসের লোকজন রয়েছে, তাদের ওপরও এ কোম্পানি ট্রায়াল করবে। আজ এ বিষয়ে ডিটেইল আলোচনা হয়েছে। অফিসিয়ালি জানিয়ে দিয়েছি আপনারা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করুন আমাদের মন্ত্রণালয় এবং আইসিডিডিআর,বি সহযোগিতায়। চীনের রাষ্ট্রদূতের সাথে আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।”

বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সব খরচ চীন বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রদূত চীনের সরকারের সাথে আলোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব তা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।… আমরা বলেছি আমাদের দেশে ট্রায়াল করার সুযোগ দেব, তবে আমরা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনটা পাই, সে কথাটার উপর জোর দিয়েছি।”

আরও পড়ুন