অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিচার শুরু

অস্ত্র আইনের মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2020, 07:40 AM
Updated : 23 August 2020, 01:34 PM

ঢাকা মহানগরের এক নম্বর বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ রোববার এই দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ৩১ অগাস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ঠিক করে দিয়েছেন।

অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য পাপিয়া ও সুমনকে এদিন কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু এবং তাপস পাল।

অন্যদিকে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবু ফাতেহ মো. গোলাম ফাত্তাহ ও শাখাওয়াত হোসেন।

এ ট্রাইবুনালে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি তাপস পাল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পাপিয়া ও সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা দোষী না নির্দোষ।

“তারা দুজনেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে এ মামলা থেকে অব্যাহতি চান। শুনানি শেষে বিচারক তাদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করেন।”

স্বামীর সঙ্গে শামীমা নূর পাপিয়া। ছবি: ফেইসবুক থেকে

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সে সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ১১ হাজার ৪৮১ ডলার, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কিছু মুদ্রা এবং দুটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।

পরে পাপিয়ার ফার্মগেইটের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০টি গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড উদ্ধারের কথা জানায় র‌্যাব। অভিযান চালানো হয় পাপিয়ার নরসিংদীর বাড়িতেও ।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটির টাকার উপরে।

গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র‌্যাব। বিমানবন্দর থানায়ও তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আর মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডি আরেকটি মামলা করে। এরপর দুদকও পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামে।

এর মধ্যে শেরে বাংলা নগর থানার অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় গত ২৯ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দেন র‌্যাবের দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।

রোববার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে পাপিয়া ও সুমনের অব্যাহতির আবেদন করে তাদের আইনজীবী গোলাম ফাত্তাহ দাবি করেন, যে অস্ত্র নিয়ে এই মামলা, সেটি তার মক্কেলদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়নি।

“অস্ত্রটি কোথা থেকে কার কাছ থেকে পাওয়া গেল তার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা ও তথ্য অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। কথিত ওই অস্ত্রের মালিকনার উৎস সম্পর্কেও স্পষ্ট কোনো তথ্য অভিযোগপত্রে নেই।

“অথচ অস্ত্র মামলায় বিবেচনা করা হয় নলেজ, পজেশন ও কন্ট্রোল আসামিদের ছিল কিনা। সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের উদ্রেক হলে তা আসামিদের পক্ষে যায়।”

পাপিয়া ও সুমনকে ‘ফাঁসানোর জন্য’ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিজেরাই ওই অস্ত্রের ঘটনা ‘আবিষ্কার’ করেছে বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী ফাত্তাহ।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলাটি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হবে। বিচারে গেলে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট হবে। তাদের এ মামলায় এখনই অব্যাহতি দেওয়া হোক।”

এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, “এ অস্ত্র বিভিন্ন চাঁদাবজি, অপকর্মে ব্যবহার করা হত। তা ছাড়া এ অস্ত্রে সম্পর্কে জ্ঞান, দখল এবং নিয়ন্ত্রণ আসামিদের ছিল।”

এ সময় দুই আসামির পক্ষে জামিন চাওয়া হলে শুনানি শেষে বিচারক তাও নাকচ করে দেন ।   

শুনানির সময় সুমন ছিলেন লোহার শিক দিয়ে ঘেরা আসামির কাঠগড়ায়, আর পাপিয়া বিচারকের ডায়াসের পাশে নারী পুলিশ পরিবেষ্টিত অবস্থায়।

সেখানে উপস্থিত আইনজীবীরা জানান, শুনানির সময় পাপিয়া ও সুমনকে অনেকটাই স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। অভিযোগ গঠনের পর কোনো প্রতিক্রিয়া তরা দেখাননি। বিচারকের উদ্দেশে কোনো কথাও বলেননি।  

পুরনো খবর