প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলবে কীভাবে, পরিকল্পনা প্রস্তুত

করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে, সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2020, 03:02 PM
Updated : 19 August 2020, 03:04 PM

বিদ্যালয় খুলে দেওয়া অন্তত ১৫ দিন আগ থেকে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করা হবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন।

বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, আমরা ‘স্কুল রি-ওপেনিং প্ল্যান’ তৈরি করেছি। স্কুল খোলার ১৫ দিন আগে শিক্ষকদের বলব, লোকজন দিয়ে বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ আছে।

বিদ্যালয় খুলে দিলে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে স্কুলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, যাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকবে তাদের বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

“স্কুলে প্রবেশের আগে অবশ্যই হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে যেতে হবে।”

গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পর সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একেকটি বেঞ্চে দুইজন করে শিক্ষার্থীকে বসানো হবে।

“একসঙ্গে অর্ধেক শিক্ষার্থী যেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কারণ একটা বেঞ্চে যখন মাত্র দুইজনকে বসাব তখন সবাইকে একসঙ্গে স্কুলে আনা যাবে না। আমাদের সব স্কুলে তেমন অবকাঠামোও নেই।”

বিদ্যালয় খোলার তারিখ চূড়ান্ত হলে স্কুল রি-ওপেনিং প্ল্যানগুলো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান জাকির হোসেন। তবে কবে নাগাদ বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হতে পারে সে বিষয়ে কোনো ধারণা তিনি দিতে পারেননি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত এই ছুটি চলবে বলে জানানো হয়েছে, তবে এরপরও স্বাভাবিক ক্লাসে ফেরার পরিবেশ হবে কি না, সে নিশ্চয়তা নেই।

দেশে গত এক দিনে আরও ২ হাজার ৭৪৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।

নতুন রোগীর সংখ্যা দুই মাস আগের তুলনায় কমে এলেও এখনও তা প্রতিদিনই আড়াই হাজারের উপরে থাকছে।

দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পর আগের মতো প্রতিদিন সব বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হবে না, সিলেবাসও কমাতে হবে।

“ছাত্রছাত্রীরা যাতে আগের মত স্কুলে এসে হৈ-হুল্লোর করে খেলাধুলা করতে না পারে সে বিষয়টি শিক্ষকদের কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে।”

স্কুল রি-ওপেনিং পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এক বেঞ্চে তিন, চার বা পাঁচজন শিক্ষার্থী বসতে পারবে না। দূরত্ব বজায় রেখে পাঠদান করতে হবে, এক বেঞ্চে দুইজন শিক্ষার্থীকে বসাতে হবে। বিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার সাবান ও পর্যাপ্ত পানি রাখতে হবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যালয় খোলার পর সপ্তাহের ছয় দিনই সবার ক্লাস হবে না। গুরুত্বপূর্ণ পাঠগুলো নির্বাচন করে কোন দিন কোন বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হবে তা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের বসে নির্ধারণ করতে হবে।

বিদ্যালয় চলাকালে করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে ভিড় করে খেলাধুলা, আড্ডা বা গল্প করতে পারবে না। সামাজিক দূরত্ব রেখে তাদের চলাফেরা করতে হবে।

মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের জন্য আলাদা আলাদা নির্দেশনা এই পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে শিক্ষকদের তা শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে।

এছাড়া বিদ্যালয়ের দৃশ্যমান স্থানে স্কুলের সব শিক্ষকেদের মোবাইল ফোন নম্বর ছাড়াও পার্শ্ববতী হাসপাতাল-ক্লিনিক, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যোগাযোগের নম্বরগুলো লিখে রাখতে হবে।