জেকেজি: অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছালো

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরী, তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি সাত দিন পিছিয়ে গেছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2020, 09:59 AM
Updated : 13 August 2020, 12:47 PM

আসামিদের মধ্যে কয়েকজনের সময় আবেদন মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারী এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ২০ অগাস্ট নতুন দিন ঠিক করে দিয়েছেন।

সাবরিনা-আরিফ দম্পতিসহ ছয় আসামির পক্ষে এদিন জামিন চাওয়া হলে শুনানি শেষে তা নাকচ করে দেন বিচারক।

জেকেজির বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছিল গত ২৩ জুন। এরপর জুলাইয়ের মাঝামাঝি তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী গত ১৩ আগাস্ট অভিযোগপত্র দিলে আদালত অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৩ অগাস্ট দিন ধার্য করে দেয়। 

অভিযোগপত্রে সাবরিনা ও আরিফকে জালিয়াতির ‘হোতা’ বলে উল্লেখ করা হয়। আর বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ওই জালিয়াতিতে ‘সহযোগিতা’ করেছেন।

বাকি আসামিরা হলেন- আরিফুলের বোন জেবুন্নেছা রিমা, সাবেক কর্মচারী হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিলা পাটোয়ারী, জেকেজির কোঅর্ডিনেটর আবু সাঈদ চৌধুরী, জেকেজির কর্মচারী বিপুল দাস ও শফিকুল ইসলাম রোমিও।

অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আট আসামির সবাইকে বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

অভিযোগ গঠনের জন্য সময় চেয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন, সাইফুল ইসলাম সুমন, শহীদুল্লাহ কায়সার, মো. আমান উল্লাহ ফিরোজ, কাজী আবু তাহের শুনানি করেন।

তাদের আবেদনে বলা হয়, অভিযোগপত্র জমা পড়ার সাত দিনের মধ্যে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ ‘অভূতপূর্ব’ বিষয়। তাছাড়া মহামারীর কারণে সব কিছুই এখন এলোমেলো, অভিযোগপত্রের সত্যায়িত কপি এখনও সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে পাওয়া যায়নি। সে কারণে শুনানি পেছানো প্রয়োজন। 

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের বরখাস্ত চিকিৎসক সাবরিনার আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন বলেন, “প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিমান্ড আবেদনে আদালতে বলা হল, তিনি (সাবরিনা)  জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান। পরে যখন চেয়ারম্যান হিসাবে কোনো প্রমাণপত্র পেলেন, না তখন বললেন যে সাবরিনা জেকেজির মালিক। আসলে তিনি মালিকও নন।

“জেকেজির সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই, তা নয়। তবে তিনি কোনো নীতি নির্ধারক ছিলেন না। মামলার এজাহারে বর্ণিত কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আসে না। এ মামলার দুটি ধারা বাদে পাঁচটি ধারাই জামিনযোগ্য। যে ধারাগুলো জামিন অযোগ্য, সেগুলো সাবরিনার বিরুদ্ধে আসে না।”

আরিফুল চৌধুরীর আইনজীবী সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, “ইউরোপ আমেরিকার অনুসরণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে জেকেজির কর্মী বাহিনী স্যম্পল জমা দিতেন । স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্ব ছিল এগুলো পরীক্ষা করার। শুধু আমাদের একার দায় তো নেই।”

সুমন দাবি করেন, রমনা থানার ২০১২ সালের একটি মামলায় আরিফুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, যেটির রায় হয়ে গেছে ২০১৮ সালের ১৬ জুন। রমনা থানার মামলা নম্বর ২৪(৮) ২০১২ । মামলার ধারা ৪২০/৪০৬/ ৫০৬/ ১০৯।

“এ যেন মৃত মানুষকে জীবিত করা। এ মামলাটির সত্যায়িত কপি আমি সামনের তারিখে আদালতে জমা দেব।”

রাষ্ট্রপক্ষে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু এবং একএম সাজ্জাদুল হক শিহাব।

শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আরিফকে কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি। তাবে তার স্ত্রী সাবরিনা এজলাসের বাইরে জানালার পাশে অবস্থানরত আত্মীয়দের সঙ্গে হাত তুলে ইশারা বিনিময় করেন। একজন কনিষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গেও তাকে কথা বলতে দেখা যায় ।

শুনানির সময় আসামিদের নিরাপত্তার জন্য আদালত কক্ষে ছিলেন প্রায় ২০ জন পুলিশ সদস্য এবং আইনজীবী। এর বাইরে আরও জনা পঁচিশেক আইনজীবী এবং ব্যক্তি ছিলেন, যারা শুনানির সঙ্গে যুক্ত নন। সাংবাদিক ছিলেন ৭/৮ জন। জনা পাাঁচেক আদালত কর্মচারীও ছিলেন। আদালত কক্ষে এত ভিড় নিয়ে আইনজীবীদের কেউ কেউ উষ্মা প্রকাশ করেন।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথকেয়ার।

কিন্তু জুনের শেষ দিকে অভিযোগ আসে, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল জেকেজি। নমুনা পরীক্ষা না করে রোগীদের ভুয়া সনদও তারা দিচ্ছিল।

রাজধানীর কল্যাণপুরের কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে তাদের কম্পিউটার থেকে চারজন প্রবাসীরসহ ৪৩ জনের নামে তৈরি করা করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সনদ পাওয়া যায়।

পরদিন কামাল হোসেন বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন ওই দুইজনের বিরুদ্ধে। সরকারি নাম ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ, কাজে অবহেলার মাধ্যমে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রামণ বিস্তারের ঝুঁকি তৈরি, করোনাভাইরাসের সনদ জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয় সেখানে।

হুমায়ুন ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজির সিইও আরিফুল চৌধুরী, তার বোন জেবুন্নেছাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

পরে ১২ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন তিনি।

আরও খবর-