‘মুজিব কিল্লা’ নির্মাণ প্রকল্পের ধীরগতিতে ক্ষোভ সংসদীয় কমিটির

প্রকল্পের মেয়াদের অর্ধেকের বেশি সময় পার হলেও ‘মুজিব কিল্লা’ নির্মাণ বা সংস্কারে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2020, 12:33 PM
Updated : 12 August 2020, 12:33 PM

এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা জানতে উপ-কমিটিও গঠন করা হয়েছে। উপ-কমিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার জটিলতা ও কারণ চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেবে।

 বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নির্মাণ করেছিল। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ওই সব ‘মুজিব কিল্লা’ পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

 বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিত্যক্ত মুজিব কেল্লা সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে আরও কেল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর একনেকে ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদকাল হচ্ছে জুলাই ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২১।

 সম্পূর্ণ রাজস্বখাতভুক্ত এক হাজার ৯৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার এই প্রকল্পে ঘুর্ণিঝড়প্রবণ ১৬ জেলার ৬৪ উপজেলা, বন্যা ও নদীভাঙ্গণ প্রবণ ২২ জেলার ৮৪ উপজেলায় বিদ্যমান ১৭২টি মুজিব কিল্লা সংস্কার ও উন্নয়ন এবং ৩৭৮টি নতুন মুজিব কিল্লায় নির্মাণসহ মোট ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ হওয়ার কথা।

 সাড়ে তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পের দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও এর দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার সমস্যা খতিয়ে দেখতে সংসদীয় কমিটি যে উপ-কমিটি গঠন করেছে তার আহ্বায়ক করা হয়েছে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে। অন্য দুই সদস্য হলেন জুয়েল আরেং ও মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকদিন হল এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা এর দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখতে পাইনি।

“এটা কেন হয়নি? এর কী জটিলতা? কোথায় কী অনিয়ম রয়েছে তা চিহ্নিত করার জন্য আমরা সাব কমিটি গঠন করেছি। কমিটিকে সার্বিক বিষয় প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”

এদিকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে চলমান বন্যায় সমানহারে বরাদ্দ না দিয়ে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিরূপণ করে চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।

এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, “দেখা যাচ্ছে কোন এলাকার কোথাও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি আবার কোথাও কম হয়েছে। কিন্তু দুটি এলাকায় একই পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের চাহিদা পুরণ করা সম্ভব হয় না। এজন্য আমরা প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিরূপণ করে বরাদ্দ দেওয়ার ‍সুপারিশ করেছি।”

এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বন্যা কবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তার অনুলিপি সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে সভা আয়োজন করতে কমিটি সুপারিশ করে। 

এছাড়া বৈঠকে কমিটি পূর্ববর্তী বৈঠকে গ্রামীণ অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য চল্লিশ দিনের কর্মসূচী প্রকল্পে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি দুইশ টাকা হতে বাড়িয়ে পাঁচশ টাকায় নির্ধারণ করার সুপারিশ আবারও অর্থ বিভাগকে বিবেচনা করার জন্য সুপারিশ করে।   

 এ বি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, আফতাব উদ্দিন সরকার, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জুয়েল আরেং, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও কাজী কানিজ সুলতানা অংশ নেন।