সাড়ে চার মাস পর বুধবার বেলা সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় উচ্চ আদালতের স্বাভাবিক বিচারকাজ।
ফলে বিচারক, আইনজীবী, বিচার প্রার্থী ও আদালত সংশ্লিষ্টদের আগমনে অনেকটাই মুখর হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ।
আদালত কক্ষে বিচারক, আইনজীবী, বেঞ্চ কর্মকর্তারা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চললেও আদালত কক্ষের বাইরে তেমনটা ছিল না।
বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী, আদালতের স্টাফ, ক্লার্ক, সাংবাদিকদের বেশিরভাগের মুখ মাস্কে ঢাকা থাকলেও মাস্ক ছাড়াও কাউকে কাউকে দেখো গেছে। আবার অনেকের মাস্ক ছিল থুতনির নিচে নামানো।
সুপ্রিম কোর্টের কোনো ফটকে তাপমাত্রা পরিমাপ বা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা না থাকলেও সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করতে দেখা গেছে।
কোনো কোনো আদালতে মামলা উপস্থাপনের আবেদন জমা দিতে গিয়ে আইনজীবীরা প্রথম দিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারলেও পরে আদালতের নির্দেশে সামাজিক দূরত্ব মেনেই আইনজীবীদের আবেদন জমা দিতে হয়।
দীর্ঘদিন পর কর্মক্ষেত্রে স্বশরীরে ফিরতে পেরে অনেক আইনজীবীকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে।
আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিঃসন্দেহে ভালো লাগছে। কিন্তু প্রাণবন্ত হতে পারছি না।
“কারও সামনে দাঁড়াতেই এখন ভয় লাগে। আর মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখলে তো শত্রুর মতো মনে হয়। এখন একটাই চাওয়া, খুব শিগগিরই স্বাভাবিক দিন ফিরে আসুক।”
আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা নিরাপদে থেকে বিচারিক কাজ চালিয়ে নেবেন বলেই প্রত্যাশা করছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদা পারভীন ফ্লোরা।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন গত সোমবার হাই কোর্টের ৩৫টি ভার্চুয়াল বেঞ্চের পাশাপাশি ১৮টি নিয়মিত বেঞ্চ গঠন করে দেন। সে অনুযায়ী বুধবার বেলা সাড়ে ১০টা থেকে বসে এসব নিয়মিত বেঞ্চ।
হাই কোর্টের ৩৫টি ভার্চুয়াল বেঞ্চের মধ্যে ২৪টি দ্বৈত ও ১১টি একক বেঞ্চ রয়েছে। আর ১৮টি নিয়মিত বেঞ্চের মধ্যে দ্বৈত বেঞ্চ আছে ১৩টি, ৫টি একক বেঞ্চ।
নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে ছুটি ঘোষণা করে। তার সঙ্গে মিল রেখে আদালতেও শুরু হয় ছুটি। সরকারের সাধারণ ছুটির সঙ্গে আদালতের সাধারণ ছুটিও বাড়তে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে ‘ভার্চুয়াল আদালতে’ শুনানির জন্য গত ৯ মে সরকার ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার’ অধ্যাদেশ জারি করে; সংসদ যেটিকে পরে আইনে পরিণত করেছে।
এরপর ১১ মে থেকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের অধস্তন ও ১২ মে থেকে উচ্চ আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়।
সরকার ৩০ মে পর সাধারণ ছুটি আর না বাড়ালেও ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে চলছিল দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকাজ।
তবে ভাইরাস সংক্রমণ চলতে থাকলেও বিভিন্ন জেলায় আইনজীবীদের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক সময়ের মতো বিচার চালানোর দাবি উঠে।
পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে গত ৫ আগস্ট থেকে দেশের অধস্তন আদালতে শুরু হয় স্বাভাবিক বিচারকাজ।
এর মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিচারপতির কাছে গত ৮ জুলাই প্রস্তাব করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সভা করেন সর্বোচ্চ আদালতের উভয় উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে। ওই সভার পর হাই কোর্ট পুরোদমে খোলার সিদ্ধান্ত দেন প্রধান বিচারপতি।