কেমন কর্মকর্তা ছিলেন, নানা বিশেষণে জানালেন স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আজাদ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, কেউ অপরাধ করে থাকলে তিনি নিজেও তার ‘কঠোর শাস্তি’ চান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2020, 11:39 AM
Updated : 12 August 2020, 03:07 PM

বুধবার দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ কথা বলেন।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে একটি দল এদিন তাকে সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে।  

সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হওয়া আজাদ বলেন, “আমি একজন কঠোর পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান, সৎ, দক্ষ, সফল এবং মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবেই সারাজীবন কাজ করেছি। আমি একজন অহঙ্কার এবং অহমিকামুক্ত, সরল এবং সজ্জন ব্যক্তি।”

২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদে ছিলেন ডা. আজাদ। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পরও তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে ওই পদে রেখেছিল সরকার। সে অনুযায়ী তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী বছরের এপ্রিলে।

কিন্তু গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ হতে থাকলে বিপাকে পড়তে হয় ডা. আজাদকে।

মার্চের শেষ ভাগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক পাঠানো হয়, তার প্যাকেটে ‘এন-৯৫’ লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক। সে সময় সমালোচনার মধ্যে আরও অনেকের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের নামও আসে।

এরপর করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ার ও রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণ ও জালিয়াতির খবর ফাঁস হলে ডা. আজাদ তোপের মুখে পড়েন। এরপর গত ২১ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র দেন তিনি।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের নিজের বক্তব্য জানিয়ে চলে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদত্যাগী মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ । ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দুদক বলছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরস্পর যোগসাজশে ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে’ কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য ‘নিম্নমানের’ মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনে বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে কমিশনের হাতে।

এসব অভিযোগের অনুসন্ধানে গত ১৫ জুন দুদক কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন শিবলীকে প্রধান করে চার সদস্যের এই অনুসন্ধান টিম গঠন করে কমিশন। শিবলীই গত ৬ অগাস্ট আবুল কালাম আজাদকে তলব করে চিঠি পাঠান।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সোয়া ৩টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের পর অধ্যাপক আজাদ বেরিয়ে এলে তাকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। তিনি তখন সঙ্গে থাকা কাগজ থেকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর তিনি এ সময় দেননি। 

পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আজাদ বলেন, “আমি লক্ষ্য করছিলাম, আমাকে নিয়ে অপপ্রচারের অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। পদ আঁকড়ে রাখা আমার কাছে সম্মানের বিষয় নয়। তাই বিবেকতাড়িত হয়ে গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করি।”

দুদকে আসার কারণ ব্যাখ্যা করলেও জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে কোনো তথ্য আজাদ তার লিখিত বক্তব্যে দেননি।

“সিএমএসডি কর্তৃক কোভিড সংশ্লিষ্ট ক্রয় সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে এ বিষয়ে আমি কী জানি, তা শোনার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাগণ আজ আমাকে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আমি যা জানি তা তাদের বিস্তারিত বলেছি। তদন্তাধীন বিষয় সম্পর্কে এ মুহূর্তে আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি কিছু আপনাদের বলা সম্ভব নয়।”

এরপর নানা বিশেষণে নিজেকে উপস্থাপন করে অধ্যাপক আজাদ বলেন, “জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সকল ক্ষেত্রেই আমার পর্যাপ্ত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং কর্মদক্ষতা আছে। কোভিডের মত মহাদুর্যোগে যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনহানি না ঘটে, সেজন্য আমার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, বিবেকবোধ ও সদিচ্ছা থেকে নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে কাজ করে এসেছি।

“কোভিড থেকে নিজেকেও বাঁচাতে পারিনি, মৃত্যুর দুয়ার থেকে পরম করুণাময়ের অনুগ্রহে এবং চিকিৎসকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুস্থ হয়েছি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরদিনই কাজে যোগ দিয়েছি। কারণ কোভিড এমন এক মহাদুর্যোগ, যে বিশ্রামের কথা ভাবতে পারিনি।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থাকাকালে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ (ফাইল ছবি)

চিকিৎসক, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক বলেন, “এ কথা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, কেউ অপরাধ করলে তার কঠোর শাস্তি হোক এটা আমি চাই, এ বিষয়ে তদন্তে আমি প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করব।”

করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার বিষয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে ডা. আজাদকে বৃহস্পতিবার আবারও কমিশনের কার্যালয়ে হাজির হতে হবে।

রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (ওএসডি) ডা. মো. আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক মো. ইউনুস আলী এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলামকেও বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

পুরনো খবর