ঢাকায় জরিপ চালিয়ে ৯ শতাংশের কোভিড-১৯ শনাক্ত

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার সোয়া তিন হাজার পরিবারের ১২ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে ৯ শতাংশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2020, 12:34 PM
Updated : 11 August 2020, 01:04 PM

ইউএসএআইডি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গত ১৮ এপ্রিল থেকে ৫ জুলাই এ খানা জরিপ চালানো হয়।

স্থানীয় পর্যায়ে কোভিড-১৯ কতটা বিস্তার লাভ করেছে, তা জানতে এই জরিপ চালানো হয়। সোমবার জরিপের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে আইইইডিসিআর।

এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত যে পরীক্ষা করছে, তাতে ২২ শতাংশের মত কোভিড-১৯ শনাক্ত হচ্ছে। তার সঙ্গে তুলনা করলে জরিপে পাওয়া সংক্রমণের হার কম মনে হতে পারে। কিন্তু জরিপের এই ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ।”

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশে যে ২ লাখ ৬৩ হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে ৬৭ হাজার ১৩৫ জন ঢাকার বাসিন্দা।

তবে পরীক্ষা নিয়ে দুর্ভোগসহ নানা কারণে আক্রান্ত অনেকেই এ হিসাবের বাইরে রয়ে গেছেন। আবার যাদের মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ সেভাবে দেখা যায়নি, তারা পরীক্ষার আওতায় আসেননি।

সে কারণে আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বির এই যৌথ জরিপের মাধ্যমে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের চিত্র ‘কিছুটা বোঝা যাচ্ছে’ বলে মনে করছেন কেমব্রিজের পিএইচডি ডিগ্রিধারী ডা. মুশতাক হোসেন, যিনি এই সঙ্কটে সরকারকে পরামর্শ সহায়তা দিয়ে আসছেন।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরীক্ষায় নিশ্চিত রোগীর সংখ্যার চেয়ে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা যে অনেক বেশি, তা এই জরিপে ‘প্রমাণ হয়েছে’।

“আমি বলেছি আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় যত পাওয়া যাবে, তার চেয়ে কমপক্ষে দশগুণ বেশি মৃদু লক্ষণযুক্ত রোগী বাইরে পাওয়া যাবে, কারণ অনেকেই রয়েছেন উপসর্গবিহীন। জরিপের এই ফলাফল সেটার পক্ষেই যায়।

“এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে ৬৭ হাজার ১৩৫ জন রোগী শনাক্তের কথা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু যদি ঢাকার মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ হিসেবে ধরা হয় তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হবে।”

আইইডিসিআর জানিয়েছে, এই জরিপের আওতায় আনা পরিবারগুলোর প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের ভিত্তিতে উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গহীন- এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

জরিপের দিন বা আগের সাত দিনের মধ্যে কোনো পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে যদি কোভিড-১৯–এর চারটি উপসর্গের অন্তত একটি দেখা গিয়ে থাকে, তাহলে সেই পরিবারকে ‘উপসর্গযুক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

যেসব পরিবারে কারও মধ্যে ওই সময়ে কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি, তাদের রাখা হয়েছে ‘উপসর্গহীন’ ক্যাটাগরিতে।

দুই সিটি করপোরেশনের মোট ৩ হাজার ২৭৭ পরিবারের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। এসব পরিবারের মোট ২১১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ১৯৯ জনের নমুনা নিয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়।

আর ‘উপসর্গযুক্ত’ পরিবারগুলোর ৪৩৫ জন উপসর্গহীন ব্যক্তিকে এ জরিপের জন্য বেছে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ২০১ জনের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়েছে।

‘উপসর্গহীন’ পরিবারগুলো থেকে জরিপে বেছে নেওয়া হয় ৮২৭ জন উপসর্গহীন ব্যক্তিকে। তাদের মধ্যে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয় ৫৩৮ জনের।

এর বাইরে ঢাকার ছয়টি বস্তি এলাকার ৭২০টি পরিবারকে এই জরিপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

জরিপে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে ৫ শতাংশ ছিল ‘উপসর্গযুক্ত; অর্থাৎ এসব পরিবারের কারও না কারও মধ্যে উপসর্গ ছিল। আর জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মোট সংখ্যার ২ শতাংশের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ ছিল।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, যাদের মধ্যে উপসর্গ ছিল, তাদের ৩০ শতাংশ; ‘উপসর্গযুক্ত’ পরিবারের যে উপসর্গহীন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের ১৪ শতাংশ এবং ‘উপসর্গহীন’ পরিবারের উপসর্গহীন ব্যক্তিদের ৮ শতাংশের আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে।

সব মিলিয়ে ঢাকায় এ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৯ শতাংশের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়েছে সমীক্ষার ফলাফলে।

সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের ৫৩ শতাংশের মধ্যে জ্বর, ৩৬ শতাংশের মধ্যে সর্দি-কাশি, ১৭ শতাংশের মধ্যে গলাব্যথা এবং ৫ শতাংশের মধ্যে শ্বাসকষ্টের লক্ষ্মণ দেখা গেছে পরীক্ষার দিন।

পরীক্ষায় যাদের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে, তাদের ১৩ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের বেশি; ১২ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে এবং ৮ শতাংশের বয়স ১০ বছরের কম।

যাদের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এক মাসের ফলোআপে তাদের মধ্যে কেবল একজনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে।

পুরো জরিপে যেখানে ৯ শতাংশের মধ্যে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে, সেখানে বস্তিবাসীর মধ্যে সংক্রমণের হার ৬ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে জরিপের ফলাফলে।