গত ৩১ জুলাই রাতে তল্লাশি চৌকিতে সিনহা রাশেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাত। সে সময় তার সহপাঠী শিপ্রা সিনহার গাড়িতে না থাকলেও একই কাজে কক্সবাজারে যাওয়া এই তরুণী সেখানে তাদের আবাসস্থল রিসোর্টে ছিলেন।
সিনহা নিহতের পর ঘটনাস্থল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিনহা নিহতের ঘটনায় এবং তার গাড়ি ও রিসোর্ট থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে পুলিশের দায়ের মামলায় আসামি করা হয় তাদের। রবি ও সোমবার শিপ্রা ও সিফাতকে জামিন দেয় কক্সবাজারের আদালত।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ সোমবার সংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনার দুই সাক্ষী শিপ্রা ও সিফাত। রোববার জামিনে মুক্ত হওয়ার পর শিপ্রার সঙ্গে প্রাথমিক কথা হয়েছে তাদের। সিফাত সোমবার জামিন পেয়েছেন, এখনও তার সঙ্গে কথা হয়নি।
“আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেই তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাত দিনের রিমান্ড পাওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে কারাগার থেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
সিনহা নিহতের ঘটনায় তার বোনের দায়ের করা হত্যা মামলায় টেকনাফের এই তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ বাহিনীর সাত সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রদীপসহ ওই তিনজনের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
সাত দিন রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া ওসি প্রদীপসহ তিনজনকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি জানিয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, “প্রথমে আদালত সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিমান্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা দিয়েছিল, আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে সেই সময়সীমা তুলে নিয়েছে।”
র্যাব কর্মকর্তা আশিক বলেন, “এই চার জন দুই দিনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য জানা প্রয়োজন। এজন্য সোমবার আদালতে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। বুধবার এ বিষয়ে শুনানি আছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার বোনের করা মামলাসহ এই ঘটনায় দায়ের করা চারটি মামলাই আদালতের নির্দেশে র্যাব তদন্ত করছে।
“ক্যামেরা, ল্যাপটপ ছাড়াও আর কী কী আলামত ছিল, তা সাক্ষীদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হবে। সে অনুযায়ী মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে তা নেওয়া হবে।”
আশিক বিল্লাহ বলেন, “কী কারণে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়টি তদন্তে জানার চেষ্টা করা হবে।”
শিপ্রা রোববার জামিন পাওয়ার তার সঙ্গে র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা কথা বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “শিপ্রা আমাদের বলেছে, এই ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন ন্যায়বিচার দেখে যেতে। শেষ রক্ত বিন্দু দিয়েও বিচার চেয়ে যাবেন।”
“তারা দুইজনই শিক্ষার্থী এবং এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমরা সে অনুযায়ী তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করব।”
দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া রাশেদ ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজেই তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত ও শিপ্রা।
পুলিশ সেদিন ঘটনাস্থল থেকেই সিফাতকে গ্রেপ্তার করে। পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শিপ্রাকে।
সিনহা নিহতের ঘটনায় এবং গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে টেকনাফ থনায় দুটি মামলা করে পুলিশ, যাতে সিনহা এবং তার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আসামি করা হয়।
আর নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করার সময় মাদক পাওয়া যায় অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে রামু থানায় মামলা করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে নিজ বাহিনীর যে কোনো কর্মকর্তাকে তার সহযোগী হিসেবে নিতে পারেন।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে সেগুলোর কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে। তারপরও তদন্ত কর্মকর্তা এসব বিষয় যাচাই করে দেখবেন।”
তবে সত্যতা যাচাই ছাড়া ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে সিফাতের বিষয়ে বরগুনায় তার গ্রামের বাড়িতে খোঁজ-খবর নিয়েছে পুলিশ। স্থানীয় থানার ওসি ইলিয়াস তালুকদার নিজে সিফাতের বাসায় গিয়ে তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন।