যুদ্ধাপরাধ: জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করায় সুনামগঞ্জের জুবায়ের কারাগারে

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি সুনামগঞ্জের মোহাম্মদ জুবায়ের মনিরের জামিন বাতিল করে তাকে ফের কারাগারে পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2020, 11:22 AM
Updated : 9 August 2020, 11:50 AM

জামিনের শর্ত না মানার অভিযোগে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রোববার এ আদেশ দেয়।

জামিন বাতিলের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন।

অসুস্থতার কারণে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি শর্তে আসামি মোহাম্মদ জুবায়ের মনিরকে জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল।

শর্তের মধ্যে ছিল তাকে ঢাকায় (বাড়ি নম্বর-১০২১, রোড নম্বর ১৭/১, বায়তুল আমান হাউজিং, আদাবর, মোহাম্মদপুর) অবস্থান করতে হবে, তিনি বা তার পরিবারের সদস্যরা  মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না, পাসপোর্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে হবে এবং নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিবেন।

কিন্তু ঢাকায় অবস্থানের শর্ত না মেনে ঈদের সময় সুনামগঞ্জের হাওরে লোকজনকে সাথে নিয়ে নৌবিহার করেছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সেসব সংবাদ যুক্ত করে প্রসিকিউশন তার জামিন বাতিল চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে।

প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শর্তসাপেক্ষে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে জামিন দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু জামিনের শর্ত না মেনে সে সুনামগঞ্জে এলাকায় গিয়েছে। সেখানে দলবল নিয়ে নৌবিহার করেছে। এতে মামলার বাদি, সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা বিষয়টি প্রসিকিউশন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।

“এছাড়া সে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেও জামিন বাতিল চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছে। গত ৪ অগাস্ট আবেদন করলে আদালত আজ আসামির উপস্থিতিতে আবেদনের শুনানি করে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।”

জুবায়ের মনিরের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, “জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেছেন এটা ঠিক। আমরা সেজন্য আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আরজি জানিয়েছিলাম। আদালত জামিন বাতিল করে তাকে জেলহাজতে দিয়েছেন।”

২০১৬ সালের ১২ মার্চ তদন্ত শুরুর পর গত বছর ১৭ জুন জুবায়ের মনিরসহ সুনামগঞ্জের ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. হান্নান খান জানিয়েছিলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে তদন্তে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লায় আসামিরা এসব অপরাধ সংগঠিত করেন।

১১ আসামির মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পাঁচজন পলাতক। গ্রেপ্তারদের একজন মোহাম্মদ জুবায়ের মনির।

গ্রেপ্তার বাকি পাঁচ আসামি হলেন- সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার দৌলতপুরের ঘুংগিয়ারগাঁও এলাকার মো. জাকির হোসেন, শশারকান্দা এলাকার মো. সিদ্দিকুর রহমান, উজানগাঁও এলাকার মো. তোতা মিয়া টেইলার, দিরাইয়ের শ্যামারচর পশ্চিম দৌলতপুর এলাকার মো. আব্দুল জলিল ও মো. আব্দুর রশিদ।

ট্রাইব্যুনালে মামলাটি অভিযোগ গঠনের শুনানি পর্যায়ে  রয়েছে বলে জানিয়েছেন  আইনজীবীরা।