রাজাকারের তালিকা করবে সংসদীয় কমিটি

রাজাকারের তালিকা তৈরিতে এবার মাঠে নামছে সংসদীয় কমিটি। এজন্য একটি ছয় সদস্যের উপ-কমিটি গঠন করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2020, 11:05 AM
Updated : 9 August 2020, 11:17 AM

রোববার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের ‘বিতর্কিত’ তালিকা প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা বাতিল করে সরকার।

এ বছর জানুয়ারি মাসে সংসদে এ নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে। খোদ সরকারি দলের সদস্যরাই এনিয়ে মন্ত্রী সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন। সেসময় মন্ত্রী নতুন করে তালিকা তৈরির কথাও জানান।

রোববার সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. শাজাহান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার সংসদীয় কমিটি তালিকা তৈরি করবে। একাজে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছেন, তাদেরকে আমরা কাজে লাগাব। আর তথ্য নেওয়া হবে যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড থেকে।

“কমান্ডারদের আমরা ব্রিফ করে দেব। তারা তালিকা তৈরি করবেন। কোনো একক কর্তৃপক্ষ তালিকা করবে না। মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এমপিদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।তারা সমন্বয় করবেন।”

রাজাকারের তালিকা তৈরিতে গঠিত উপ-কমিটির আহ্বায়ক শাজাহান খান নিজেই। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, এবি তাজুল ইসলাম ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এবং মোসলেম উদ্দিন আহমেদ।  

গত বছর বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ তালিকা প্রকাশ করেন। ওই তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য ওই তালিকা স্থগিত করা হয়।

পরে সংসদে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের থেকে পাওয়া রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের তথ্য হুবহু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপিত হলে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে তা প্রত্যাহার করা হয়।

শাজাহান খান বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশে যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরি দেওয়া হয় না। ভিয়েতনামে তিন প্রজন্ম পর্যন্ত চাকরি দেওয়া হয় না। আমরা তো মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছি। এ বিষয়টি নিয়ে আজ আলোচনা করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা যাতে সরকারি চাকরি না পায়, সে বিষয়ে কিছু একটা করা দরকার। সেজন্য রাজাকারদের তালিকাটা দরকার। এই কাজটা এবার আমরা করব।”

মুক্তিযোদ্ধার নামের আগে ‘বীর’ লেখার প্রস্তাব

এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে ‘বীর’ শব্দটি লেখার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের প্রস্তাব করেছে সংসদীয় কমিটি। মন্ত্রণালয় তাদের এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে।

শাজাহান খান বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে বীর শব্দটি লিখতে হবে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করবে।”

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট ২৪টি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার সুপারিশ করা হয়।

শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে যোগ দেন কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু, রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, এবি তাজুল ইসলাম এবং মোছলেম উদ্দিন আহম্মদ।