মায়ের ৯০তম জন্মবার্ষিকীর উদযাপন অনুষ্ঠানে শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা একথা বলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বেগম ফজিলতুন নেছা মুজিব খুনীদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তিনি তো নিজে বাঁচতে চাননি। তিনি সাহসের সাথেই সেখানে একথাই বলেছেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যা করেছো আমি তার কাছেই যাব’। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কাজেই জীবনে-মরণে তিনি আমার বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই চলে গেছেন।”
“আব্বার যেই আদর্শটা সেই আদর্শটা তিনি খুব সঠিকভাবে নিজে ধারণ করেছিলেন। আর সেটা ধারণ করেই নিজের জীবনটাকে তিনি উৎসর্গ করে দিয়ে গেছেন।”
১৯৩০ সালের ৮ অগাস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফজিলাতুন নেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তাকেও হত্যা করা হয়।
“ঠিক সেভাবেই করে গেছেন তিনি। যার ফলে আমার বাবা নিজে সম্পূর্ণভাবে একটা দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।”
বেগম ফজিলাতুন নেছার জীবন ও কর্ম থেকে রসদ নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে বর্তমান প্রজন্মের নারীদের প্রতি আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
মায়ের অনাড়ম্বর জীবনযাপনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার মায়ের মধ্যে অহমিকা বোধ কখনো ছিল না এবং তিনি কখনো সরকারি বাসভবনে এসে বসবাস করেননি।
“কাজের জন্য বাবা সকালে চলে আসতেন, বাড়িতে নাস্তা করে আসতেন, আর দুপুরের খাবার আমার মা নিজের হাতে রান্না করে টিফিন ক্যারিয়ারে করে পাঠিয়ে দিতেন। সব সময় রান্না তিনি নিজের হাতে করতেন। মায়ের রান্না খুবই ভালো ছিল, খুবই সুস্বাদু ছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
“আমরা শিক্ষা পেয়েছি, বাবা মায়ের থেকে, মাটির দিকে তাকিয়ে চলার। অর্থাৎ তোমার থেকে খারাপ অবস্থায় কে আছে তাকে দেখ। উপর দিকে তাকিয়ো না যে ভালো রয়েছে তাকে না দেখা। তোমার থেকে কে খারাপ আছে তার থেকে তুমি কত ভাল আছো সেটি উপলব্ধি কর।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা হত্যা করেছে তারা আমাদের চেনা। অনেক সেনা কর্মকর্তা আমাদের বাসায় এসেছে। আমার মায়ের হাতের খাবারও খেয়েছে। আমাদের সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তিনি বলেন, “যেখানে পাকিস্তান আমলে কোনো সেনাবাহিনীর সদস্যরা মেজরের উপরে কোন প্রমোশন পেতো না। আর স্বাধীন বাংলাদেশে যেই মেজরদের তিনি নিজে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছিলেন সেই মেজর জেনারেল জিয়া থেকে শুরু করে মেজর হুদা, কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশীদ..কর্নেল ফারুক তো আমাদের বাড়িতে ডিউটিতেই ছিল সিকিউরিটির জন্য। তারাই খুনটা করলো।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিয়ের মাধ্যমে ১০০ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে ল্যাপটপ, দরিদ্র ও অসহায় নারীদের মধ্যে ৩ হাজার ২০০ সেলাই মেশিন এবং এক হাজার দরিদ্র নারীকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার ৯০তম জন্মবার্ষিকীর উদযাপন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মতিয়া চৌধুরী।
শিশু একাডেমি প্রান্তে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ি কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।