২৫% নয়, ৯টা-৫টা অফিস করতে হবে সবাইকে

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে লকডাউন তুলে ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাড়ি বসে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হলেও সেই নিয়ম তুলে দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকশহীদুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2020, 10:24 AM
Updated : 6 August 2020, 10:24 AM

সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগের মত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস করতে হবে বলে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে তারা আগেই নির্দেশনা দিয়েছেন।

ওই নির্দেশনা পেয়ে অনেক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তা মৌখিকভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানিয়ে দিয়েছে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের শতভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্বক্ষণিক অফিস করছেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতেও সবাই একসঙ্গে অফিস করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিস করতে বলা হলেও বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তান সম্ভবাদের আগের মতই অফিসে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে চলা টানা ৬৬ দিনের লকডাউন ওঠার পর ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস খোলার পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচালের অনুমতি দেয় সরকার। এরপর অফিস আর বন্ধ করা হয়নি।

জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব কর্মকর্তাকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

“আমরা ইতোমধ্যে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তাকে সেই নির্দেশনা মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি, সকল অফিসারদের অফিসে থাকতে বলেছি।

“এখন অফিসারদের প্রতি নির্দেশ হল- সকল অফিসার ৯টা-৫টা অফিস করবেন। ৫টার পরেও যদি অফিসারদের থাকতে হয়, থাকবেন। তবে বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী ও অসুস্থদের বেলায় এটি প্রযোজ্য নয়।”

লকডাউন শেষে গত ৩১ মে থেকে অফিস চালুর পর মৌখিক নির্দেশনায় সরকারি দপ্তরগুলোতে একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে অবস্থান করতে নিষেধ করা হয়েছিল। ফলে এখনও মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে সবাইকে নির্ধারিত সময়ে অফিসে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

জনপ্রশাসন সচিব হারুন বলেন, “লকডাউনের পর অফিস খোলার সময় যেভাবে কাজ করতে সুবিধা হয়, আমরা মন্ত্রণালয়গুলোতে সেভাবে অফিস করতে বলেছিলাম। তখন অনেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ফলো করেছিল (একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি উপস্থিত না থাকা)।”

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন তখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি যেন একসঙ্গে অফিসে উপস্থিত না থাকেন সেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেভাবেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সরকারি দপ্তরে এতদিন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।

সেই নিয়ম এখন আর কার্যকর নেই বলে জানান জনপ্রশাসন সচিব হারুন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অফিস করব। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এখন থেকে সবাই স্বাভাবিক অফিস করবেন।”

গত ১৬ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছিল, এই বিভাগের সব অনুবিভাগ প্রধানরা প্রতিদিন দপ্তরে উপস্থিত থাকবেন।

“অনুবিভাগ প্রধানরা তাদের অনুবিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যে যেদিন যাদের অফিসে আসার প্রয়োজন মনে করবেন তাদেরকে অফিসে আসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।”

সেই আদেশ বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এখন ‘নিয়মিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা’ নিয়ে নতুন অফিস আদেশ জারি করেছে।

সেখানে বলা হয়েছে, “স্বাস্থ্য বিধি সংক্রান্ত ১২ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করে এ বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হল।

“তবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভবা নারীদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।”

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও এক অফিস আদেশে নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভূমি সচিব মো. মাক্ছুদুর রহমান পাটওয়ারী বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার আমাদের মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস করছেন। কাজ থাকলে কেউ কেউ বিকাল ৫টার পরেও কাজ করছেন। অসুস্থ বা অন্য সমস্যা রয়েছে এমন কয়েকজনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।”

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সবাইকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পুরোপুরি অফিস শুরু করেছেন।

“যেসব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সরকারি দপ্তর এখনও স্বার্বক্ষণিক অফিস শুরু করেনি তারা এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। শিগগিরই সব সরকারি অফিসে শতভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে দেখা যাবে।”

আরও পড়ুন