সিনহার মৃত্যু বিচারবহির্ভূত হত্যার ধারাবাহিকতা: টিআইবি

পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘ধারাবাহিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপকতার’ একটা উদাহরণ বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ-টিআইবি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2020, 05:21 PM
Updated : 5 August 2020, 05:21 PM

বুধবার প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, “একে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। বরং তা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংস্কৃতিকে স্বাভাবিকতায় রূপান্তরের একটি উদাহরণ মাত্র।” 

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

সিনহার উপর গুলি চালানো নিয়ে যে ব্যাখ্যা পুলিশ দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে সিনহার বোন নয়জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যামামলা করেছেন।

এই ঘটনায় পুলিশের করা একাধিক মামলার সঙ্গে সেনাবাহিনীর ‘প্রাথমিক তদন্তের বক্তব্য একেবারেই বিপরীত’ বলে মনে করে টিআইবি।

“এই বৈপরীত্যগুলো যথাযথভাবে আমলে নিয়ে গ্রহণযোগ্য তদন্ত করে জনগণকে জানাতে হবে আদতেই পুলিশ ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলি চালিয়েছিল কি না। নিহতের সঙ্গী শিক্ষার্থী ও অন্য সকল সম্ভাব্য সাক্ষীর নিরাপত্তাসহ সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

এদিকে বুধবার কক্সবাজারে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে’ বর্ণনা করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ।

জেনারেল আজিজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যে ঘটনাটা ঘটেছে, সেজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মর্মাহত এবং পুলিশ বাহিনী মর্মাহত। যে মেসেজটা আমরা দিতে চাই তা হচ্ছে- আমরা এটাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখতে চাই।”

টিআইবি বলছে, ২০১৮ সালের ৪ মে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজারে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সঙ্গে শতাধিক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ২৮৭ জন নিহত হয়েছেন।

“সংবিধানে কোনো নাগরিক মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকলেই তাকে বিনা বিচারে হত্যার অধিকার দেওয়া হয়নি। নিহতদের বেশ কয়েকজন কোনোভাবেই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, এমন তথ্য-প্রমাণ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি চাঁদা দেওয়া না হলে ‘ক্রসফায়ারে দেওয়ার’ মতো অভিযোগও রয়েছে।

“দেশে ইয়াবা কারবারের লাগাম টানা যায়নি, বড় বড় ক্রীড়ানকরা এক রকম প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা নিয়ে বহাল তবিয়তে আছে। আর পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত এলিট ফোর্স র‌্যাব, বিজিবি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু মাদক ব্যবসায়ী ও বেশ কিছু নিরপরাধ মানুষকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছে।

“এসব ঘটনায় কোনো গ্রহণযোগ্য তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, কার্যত দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বিনা বিচারে হত্যার লাইসেন্স বা দায়মুক্তি পেয়ে গেছে।”