বুধবার দুপুরে শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে কামাল যদি বেঁচে থাকতো এই সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো। কারণ তার যে বহুমুখী প্রতিভাটা সেই প্রতিভা বিকশিত হয়ে দেশের সকল অঙ্গনেই কিন্তু অবদান রাখতে পারতো এবং সে রেখেও গেছে ঠিকই।”
“আমার পুতুল খেলায়ও ও যেমন আমার সাথে থাকতো। ওর সাথে ছোটবেলা থেকে বাকি সব খেলায় আমিও ওর সাথে এক সাথে খেলতাম।”
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শেখ কামালের সাহসী রাজনৈতিক ভূমিকার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে তার (শেখ কামাল) যেই সাহসী ভূমিকা... কারণ ছয় দফা দেওয়ার পর থেকে যে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয় এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন জাতির পিতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় তারপরে দেশে যেভাবে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল প্রতিটি সংগ্রামে কামালের অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে।”
প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ কামালের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর জীবনের অধিকাংশ সময়ই কারাগারে কাটানোর কথা উল্লেখ করে তার জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, “কামালের জন্ম হবার পর থেকে তো বেশিরভাগ সময়ই জেলখানায়। কামাল তো আব্বাকে আব্বা বলে ডাকারও সুয়োগ পায়নি। আমরা একসাথে যখন খেলতাম আমি আব্বা বলে ডাকতাম। ও আমাকে জিজ্ঞেস করতো, হাচু আপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি?”
শেখ হাসিনা বলেন, “খুব ছোট বেলা থেকেই কামাল শুধু যে খেলা অঙ্গনে তা না, সাংসারিক কাজেও আমার মায়ের সাথে সব রকমের সহযোগিতা করতো। ওই ছোট বয়স থেকেই সে খুব দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতো।
“কামাল আমার থেকে দুই বছরের ছোট। কিন্তু তার বুদ্ধি, তার জ্ঞান, তার সব কিছুতে একটা পরিমিতিবোধ ছিল।”
শেখ কামালের বহুমুখী প্রতিভার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধার বলেন, “সে স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী সে সৃষ্টি করেছে, ঢাকা থিয়েটার যখন হয় সেখানেও তার অবদান ছিল। সে নিজে অভিনয় করতো, গান গাইতো, সেতার বাজাতো।
“খেলাধুলার মাঠে তার সব থেকে বড় অবদান। ধানমণ্ডি এলাকায় ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল না। সে-ই উদ্যোগ নেয়; ওই অঞ্চলের সবাইকে নিয়ে আবাহনী গড়ে তোলে এবং মুক্তিযুদ্ধের পরে এই আবাহনীকে আরো শক্তিশালী করে।”
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ওইদিন ঘাতকের বুলেটে নির্মমভাবে নিহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “সবই একদিনে হারাব এটা কখনোই আমরা চিন্তাও করতে পারিনি, কল্পনাও করতে পারিনি। ১৫ই অগাস্ট... যাদের সাথে কাজ করেছে, যাদের সাথে একসাথে ছিল... এমনকি ওসমানী সাহেবের এডিসি আরেকজন আর্মি অফিসার সেও একসাথে কাজ করেছে আর তাদের হাতেই নিহত হতে হলো কামালসহ আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে।
“আর তারাই যখন সরাসরি কামালের সামনে এসে কামালকে গুলি করে বা জামালকে গুলি করে বা বাড়িতে এভাবে গুলি করলো...। আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন একটা মৃত্যু হলেই তার বিচার দাবি করেন আমার কাছে, আর আমি কিন্তু বিচার পাইনি।”
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর তার দুই মেয়েকে দেশে ফিরতে বাঁধা দেওয়া হয়; বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রক্ষা করতে জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। এরপর ২১ বছর পর সরকারে এসে মামলা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের যেই সামরিক কর্মকর্তারা কোনোদিন মেজরের উপরে উঠেতে পারেননি তারা মেজর জেনারেল হয়েছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হচ্ছে, জেনারেল হচ্ছে। এটা কেন হতে পারলো? হতে পারলো দেশ স্বাধীন করার ফলেই এটা হতে পেরেছে এবং নিজের হাতেই তো তিনি (বঙ্গবন্ধু) প্রমোশন দিয়ে গেছেন। ওই মেজর জিয়া মেজর থেকে মেজর জেনারেল সেই প্রমোশনটা তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন।
“যার হাতে গড়া তাকেই হত্যা করে দিলে ঠিক যেই চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন সেই চেতনাটাই নষ্ট করতে চেয়েছিল। আর কত নির্মমভাবে হত্যা করলো।”
দেশের সেবার সুযোগ করে দিয়ে দেশের জনগণ অন্যায়, অবিচারের প্রতিকার ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করার সুযোগ দিয়েছে বলে জনগণের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান সরকার প্রধান।