ঢাবির প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের পিটুনি, আটক ৮

কোরবানির ঈদের দিন টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন আটজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2020, 06:10 PM
Updated : 3 August 2020, 06:10 PM

ফাইল ছবি

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, ইদের দিন প্রক্টরিয়াল টিমের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে।

“এর পরিপ্রেক্ষিতে সন্দেহভাজন আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। এদের মধ্যে এজাহারভুক্ত সুজন নামে একজন রয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”

গত শনিবার ঈদের দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্যাম্পাসে বহিরাগত তাড়াতে গিয়ে  টিএসসির সড়কদ্বীপে প্রক্টরিয়াল টিমের চারজন সদস্য আহত হন। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ ঘটনায় রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে।

প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের অভিযোগ, ইদের দিন প্রচুর বহিরাগত লোকজন ক্যাম্পাসে ভিড় জমিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় সবাইকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে মাইকিং করেন তারা। এ সময় টিএসসির সড়কদ্বীপে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন এমন প্রায় ১৫ জন ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখে তাদের স্থান ত্যাগের অনুরোধ করেন। পরে তারা স্থান ত্যাগ না করে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মারধর করেন।

তাদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সন্তান এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদের  (ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২১ নম্বর ওয়ার্ড) অনুসারী বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর আসাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই দিন আমরা ক্যাম্পাসে কোরবানির মাংস রান্না করে ছিন্নমূল মানুষদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছিলাম। সঙ্গত কারণেই অনেক মানুষ এসেছিল ক্যাম্পাসে। কিন্তু প্রক্টরিয়াল টিমের এরূপ আচরণ ঠিক হয়নি।”

নাজমুল নামে প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্য বিভিন্ন সময় ‘উগ্র’ অচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আসাদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের আটক করা হয়েছে তারা এই মহামারীতে ক্যাম্পাসে করোনাযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে। বিভিন্ন সময় নাজমুল নামে প্রক্টরিয়াল টিমের এক সদস্য তাদের সাথে উগ্র অচরণ করে থাকে।”

ইদ উপলক্ষে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে তার কাছে ‘বকশিস চেয়ে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের ‘অজ্ঞাতসারে’ প্রক্টরিয়াল টিমের পক্ষ থেকে নাজমুল তাকে ১৫-২০ জনের একটি তালিকা দিয়েছিলেন বলে জানান আসাদুজ্জামান আসাদ।

“তা দিতে না পারার কারণেই প্রক্টরিয়াল টিম আমার লোকজনের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেছে,” বলেন তরুণ এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

তবে ঈদের বকশিস চাওয়ার কথা অস্বীকার করে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য নাজমুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বকশিস চাইনি। ইদ উপলক্ষে ত্রাণ দেবার কথা বলে তিনিই প্রক্টরিয়াল টিমের তালিকা চেয়েছিলেন। আমি ছোট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বড় হয়েছি। কারও সাথে খারাপ আচরণ করেছি কেউ বলতে পারবে না।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের জানাতে পারত। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত তাদের সাথে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়।”

তিনি বলেন, “কেউ অভিযোগের আড়ালে ক্যাম্পাসে অপতৎপরতা, হামলা, গ্যাং, মাদকচক্র গড়ে তুললে বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো মেনে নেবে না। প্রক্টরিয়াল বডি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা দিয়ে থাকে, তাদের সাথে দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।”