‘মাস্ক ভুলে বাসায় রেখে এসেছি’

কোরবানির ঈদের পরদিন ঢাকার হাতিরঝিলে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও মহামারীর এই সময়ে উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2020, 05:13 PM
Updated : 2 August 2020, 05:13 PM

রোববার হাতির ঝিলে ভিড় জমানো এই মানুষরা বলছিলেন,ঘরবন্দি জীবনে হাঁফ ছাড়তে ঈদের ছুটির এই সময়ে বেরিয়েছিলেন তারা।

রোববার বেলা গড়িয়ে বিকাল নামতেই হাতিরঝিলের প্রতিটি পয়েন্টে বা সেতুতে দেখা গেছে বিপুল জনসমাগম। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও ছিলেন এই ভিড়ে।

তবে অধিকাংশের মুখেই ছিল না মাস্ক, ছিল না সামাজিক দূরত্ব।

বিকাল ৪টার দিকে হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সবগুলো রেস্তোরাঁ খোলা। বাস স্টপেজের পাশে খোলা খাবার দোকানগুলোতেও মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি।

হাতিরঝিলে বেড়াতে আসা দম্পতি সানিয়াত হোসেন-শান্তা জাহানের সঙ্গে কথা হয় পুলিশ প্লাজা পয়েন্টে।

সানিয়াত বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে কোথাও যেতে পারি না। ঘর থেকে একটু বের হলাম আজকে। জানি অনেক ভিড় হবে। অনেক মানুষের সমাগম হবে।

“কিন্তু মনটাকেও তো একটু চাঙ্গা রাখতে হবে। তাই স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম একটু। বেশিক্ষণ থাকব না। চলে যাব বাসায়।”

মালিবাগের বাসিন্দা আবদুল মজিদ এসেছিলেন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে। ছেলে রাহাতের বায়না ছিল হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়বে।

বাড্ডা গুদারাঘাটের গিয়ে ‘বিশেষ প্যাকেজে’ সপরিবারে চড়তে হল ওয়াটার ট্যাক্সিতে।

আবদুল মজিদ বলেন, “বাড্ডায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। এখন বাসায় যাওয়ার পথে ছেলেমেয়ে বায়না করল, হাতিরঝিল দেখে বাসায় যাবে। বাধ্য হয়ে আসতে হল। এফডিসি পয়েন্টে বোট থেকে নেমে সোজা বাসায় চলে যাব। আর কোথাও দাঁড়াব না।”

ওয়াটার ট্যাক্সিতে যারা চড়েছেন, ট্যাক্সির কর্মীরা তাদের হাতে হ্যান্ড সেনিটাইজার দিয়েছেন।

গুদারাঘাট থেকে পশ্চিম মেরুল বাড্ডা আসতে প্রতিটি রেস্তোরাঁর সামনে জটলা ছিল আগতদের। ভেতরেও ভিড় দেখা গেছে।

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে আকাশ কালো করে এল। দূর আকাশে কালো মেঘের আনাগোণা দেখা গেল। প্রকৃতির এমন রূপও হাতিরঝিলের জনস্রোত দমাতে পারেনি।

সন্ধ্যায় মহানগর সেতুতে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মাহিদুল ইসলামের সঙ্গে।

ধানমন্ডি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে আসা এই তরুণ বলেন, “কী করব! ঢাকার আর কোথায় যাওয়ার জায়গা আছে বলুন তো!  ঘরে কত দিন বন্দি থাকা যায়? একটু তো বের হতেই হবে! আর সব কিছুই তো চলছে ঠিকঠাক। মাস্ক পড়েই আসছি। আর ভিড়ের মধ্যেই যাচ্ছি না।”

একই পয়েন্টে কথা হল পোশাককর্মী পপি আক্তারের সঙ্গে। তিনি ও তার বন্ধুরা দল বেঁধে ঘুরতে এলেও কারও মুখে ছিল না মাস্ক।

এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করতেই পপি বলেন, “মাস্ক ভুলে বাসায় রেখে আসছি। আর ভিড় দেখলে কাপড়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখি।”

রোববার রাতে রামপুরা সেতুতে কথা হল তরুণ শাহাদাৎ হোসেনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নাই। তাই আসছি। কী করব?“

মধুবাগ সেতু এলাকার বাজারে উজ্জ্বল হোসেন এসেছিলেন মসলা কিনতে।

তিনি বলেন, “এই হাতিরঝিলটা এক রকম সর্বনাশ করে দিল আমাদের। কোনো একটা উৎসব লাগলেই হল। গোটা ঢাকা যেন নেমে আসে আমাদের এলাকায়। এই করোনাভাইরাসের মধ্যে যখন ঘরে থাকার কথা বলা হচ্ছে, তখন এদের কোনো মাথাব্যথা নাই। এদের মনে যা চায়, এরা তাই করবে। যতই আইন করেন, এরা মানবে না।”