কোরবানির মাংসের হাট

কোরবানির গরুর হাটের পর এবার রাজধানীতে বসেছে কোরবানির ‘মাংসের হাট’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2020, 03:30 PM
Updated : 2 August 2020, 03:30 PM

ঢাকার গরিব মানুষরা মূলত এই হাটে মাংস বিক্রেতা; আর মূল ক্রেতা হচ্ছে বিভিন্ন হোটেল, সেই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষও কম দামে মাংস কিনতে এই হাটে ঢুঁ মারেন।

গরিব মানুষরা কোরবানির ঈদের দিন ঘুরে ঘুরে যে মাংস সংগ্রহ করেন, তা সংরক্ষণের উপায় তাদের নেই, আবার একসঙ্গে এত মাংস খাবার সুযোগও নেই। তাই এই মাংস তারা বিক্রি করে দেন। তাতে হাতে কিছু নগদ টাকাও আসে।

ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে ঈদের দিন বিকালে এবং পরদিন এমন মাংসের হাট বসতে দেখা যায়।

ঈদের দিনের মতো পরদিন রোববারও মালিবাগ রেল গেইটের সামনে এবং খিলগাঁও সড়কের ফুটপাতে দেখা গেছে এমন হাট।

সেখানে একভাগ মাংস পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আবার কোথাও কোথাও কেজিতেও বিক্রি হচ্ছিল।

পেশায় দিনমজুর হোসেন আলীকে দেখা যায় ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে মাংস বিক্রি করতে।

তিনি বলেন, “স্যার আজকে বিভিন্ন জায়গা গিয়া এই মাংস পাইছি। হাড্ডি কম, শুধু মাংস। বড় গরুর মাংস।”

কেন মাংস বিক্রি করছেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি গরিব মানুষ। হাতে পয়সা-কড়ি নাই। ৪ কেজি মাংস পাইছি। বিক্রি করলে নগদ টাকা পামু, এটা উপকারে দিবো।”

পোশাককর্মী আলেয়া এসেছলেন এই হাটে মাংস কিনতে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো গরিব মানুষ। ভিক্ষা করতে পারি না। তাই পরিবারের জন্য চাইছিলাম কিছু মাংস কিনে নেব। কিন্তু আজকে মাংসের দাম বাড়তি।”

ঈদের দিন বিকালে দুই কেজি মাংস সাড়ে তিনশ টাকা দরে কিনেছিলেন জানিয়ে আলেয়া বলেন, “আজকে ডাবল হইয়া গেছে দাম।”

করোনাভাইরাস সঙ্কটের এই সময় শার্ট-প্যান্ট পরা একব্যক্তিকে এই হাটে মাংস কিনতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি বলেন, “কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য নেই, তাই এই মাংস কিনতে এসেছি। যদি পাই কয়েকদিন খাওয়া যাবে।”

সন্ধ্যার পর মালিবাগের মাংস হাটে দেখা গেল আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন কয়েকজনের কাছ থেকে ৬/৭ কেজি মাংস কিনে অপেক্ষা করছেন আর কেউ মাংস বিক্রি করতে আসে কি না। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো রামপুরা টিভি সেন্টারের কাছে এক গলিতে তার ছোট একটা খাবার হোটেল আছে। সেই হোটেলের জন্য সে মাংস কিনতে এসেছেন তিনি।

খিলাগাঁওয়ের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জানালেন, কোরবানির এসব মাংসের বড় ক্রেতা হচ্ছে ছোট ছোট হোটে্লের মালিকরা।

“আপনি দেখবেন, লুঙ্গি পড়া কিছু ব্যক্তি মাংস কিনে এখানে জমা করেন। রাত ৮টার দিকে সব নিয়ে রিকশায় করে চলে যান। এরা সবাই অলি-গলির হোটেলের মালিক। আগামী কয়েকদিন ছোট ছোট হোটেলগুলোতে কোরবানির এইসব মাংসই রান্না করে বিক্রি করা হবে।”

গামেন্টস কর্মী বিউটি জানালেন, আগের দিন তিনি ৩০০ টাকা কেজিতে মাংস কিনেছিলেন। ওই দরের আশায় আবার এসেছেন।

তিনি বলেন, “স্যার চাইছিলাম আরও দুই কেজি মাংস কিনবো। ধার-কর্জ করে টাকাও আনছি কিন্তু ….”

এই হাটে মাংস ছাড়া বিক্রি হচ্ছে গরুর পাকস্থলি, যাকে বলা হয় ‘বট’। বটের বেশ চাহিদাও দেখা গেছে। হাটে এসে কেউ জিজ্ঞাসা করছিলেন- ‘ভাই এখানে গরুর বট কোথায় পাওয়া যায়?”

শনিবার ২০০ টাকা কেজিতে বট বিক্রি হলেও রোববার তা বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়।