৩ মাসের সর্বনিম্ন নমুনা পরীক্ষা, নতুন রোগী হাজারের নিচে

কোরবানির ঈদের দিন করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসায় গত আড়াই মাসে প্রথমবারের মত এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2020, 08:59 AM
Updated : 2 August 2020, 03:10 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে বিভিন্ন ল্যাবে ৩ হাজার ৬৮৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাতে আরও ৮৮৬ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৬ জন হয়েছে।

সর্বশেষ এক দিনে এর চেয়ে কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল গত ২৬ এপ্রিল। সেদিন ৩ হাজার ৪৭৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল।

আর এক দিনে রোববারের চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ ৯ মে, সেদিন ৬৩৬ জন নতুন রোগী শনাক্তের তথ্য দেওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।

রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে; এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৫৪ জনে।

আইইডিসিআরের ‘অনুমিত’ হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৫৮৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল মোট ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা রোববার দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন।

 

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, তা দুই লাখ পেরিয়ে যায় ১৮ জুলাই। এর মধ্যে ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।

প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় বুলেটিনে, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৭৭টি ল্যাবে ৩ হাজার ৬৮৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে মোট ১১ লাখ ৮৯ হাজার ২৯৫টি নমুনা।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ০৫ শতাংশ, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ঈদের আগে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে সব ধরনের ছুটির দিনে কোভিড-১৯ পরীক্ষার আরটিপিসিআর ল্যাব চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।

চিঠিতে বলা হয়েছিল, “বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঈদের দিন, সরকারি যে কোনো ছুটি এবং সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য দেশের সব পিসিআর ল্যাবরেটরি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।”

অর্থাৎ, ছুটির সময়ও নমুন সংগ্রহ, নমুনা গবেষণাগারে পাঠানো এবং পরীক্ষার কাজ চালাতে হবে। 

ঈদের আগের দিনও সারা দেশে ৮ হাজার ৮০২টি নমুনা পরীক্ষার তথ্য জানানো হয়েছিল শনিবারের বুলেটিনে। সেই সংখ্যা ঈদের দিন কেন অর্ধেকেরও বেশি কমে গেল, তার কোনো ব্যাখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। তাদের মধ্যে ২০ জন হাসপাতালে এবং ২ জন বাড়িতে মারা গেছেন।

তাদের ৮ জন ঢাকা বিভাগের, ৩ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪ জন রাজশাহী বিভাগের, ৩ জন খুলনা বিভাগের, ২ জন বরিশাল বিভাগের, ১ জন সিলেট বিভাগের ও ১ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

এই ২২ জনের মধ্যে ২ জনের বয়স ছিল ৭০ বছরের বেশি। এছাড়া ৯ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ৮ জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।

নাসিমা সুলতানা জানান, এ পর্যন্ত দেশে যে ৩ হাজার ১৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে, তাদের ৪৬ দশমিক ৩৫ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি।

এছাড়া ২৮ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর বছরের মধ্যে, ২ দশমিক ৭৬ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ১ দশমিক ০১ শতাংশের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, এবং শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশের বয়স ১০ বছরের নিচে।

তাদের ৪৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ঢাকা বিভাগে, ২৪ দশমিক ২৫ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগে, ৬ দশমিক ০২ শতাংশ রাজশাহীর, ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ খুলনা বিভাগের, ২ দশমিক ১৬ শতাংশ ময়মনসিংহ বিভাগের, ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ রংপুর বিভাগের, ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ সিলেট বিভাগের এবং ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

 

পুরনো খবর